08/02/2025 যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য আলোচনায় ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩১ জুলাই ২০২৫ ১৩:২০
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে দেশটির সরকার বাংলাদেশের ওপর কত হারে শুল্ক আরোপ করবে, তৃতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রথম দিনে তা নির্ধারিত হয়নি। এর আগে দুই দফা আলোচনায়ও কোনো ফল আসেনি। তবে শেষ দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্ত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আশা করছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে রয়েছে। এই দলে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োজিত প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা বলেন, বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আলোচনায় শুল্ক ও বাণিজ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। আর বাংলাদেশের দিক থেকে দর-কষাকষির পুরো বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ দলের প্রথম দিনের আলোচনা হয় বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের আলোচনা বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত। ইউএসটিআরের সঙ্গে এ আলোচনা চলবে আজ বৃহস্পতিবারও।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সকাল সাতটায় জানান, ‘প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হলো। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত এত ত্বরিত ফল আসে না। তবে যেসব বিষয় ও শর্ত ছিল, এইটুকু বলতে পারি যে সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগের দুই দফা বৈঠকে যেসব বিষয় অমীমাংসিত ছিল, সেগুলোতে একমত হয়েছে উভয় দেশ। কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র কী সুবিধা দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে, আলোচনার টেবিলে সেগুলো উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ দিনই হবে।
বাংলাদেশি পণ্যে গত ২ এপ্রিল ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করে। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
অন্তর্বর্তী সরকার আশাবাদী
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন যে যুক্তির কথা তুলে ধরে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশ সে জায়গাটি নিয়েই তিন থেকে চার মাস ধরে কাজ করেছে। আর সেটি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক করা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এ দফার আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল আশা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে বছরে সাত লাখ টন করে গম কেনা হবে পাঁচ বছর ধরে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এক সপ্তাহ আগেই ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি বোয়িং থেকে কেনা হবে ২৫টি উড়োজাহাজ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি খাত যাতে তুলা, সয়াবিন বীজ, ডাল ইত্যাদি পণ্য আমদানি বাড়াতে পারে, সে ব্যাপারে নীতি সহায়তা দেবে সরকার।
এদিকে ব্যবসায়ীদের একটি দলও আলাদাভাবে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দলে রয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিএমএর দুই পরিচালক মোশারফ হোসেন ও মাসুদ রানা, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলসের পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব প্রমুখ।
এ ব্যাপারে আমিরুল হক বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এলপিজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা দেশটি থেকে এলপিজি আমদানি বাড়াব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.