07/26/2025 জোহরান মামদানির বহিষ্কার দাবি, নিউ ইয়র্কে উত্তেজনা
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৪ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৭
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ার পরপরই জোহরান মামদানিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান এক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান। উগান্ডায় জন্ম নেওয়া মামদানি শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব লাভ করেন।
টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন, মামদানির লেখা র্যাপ গানে হামাসপন্থী বার্তা রয়েছে এবং তাই বিচার বিভাগ তার নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। তবে বিচার বিভাগ এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, 'যদি এসব অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।'
ডোনাল্ড ট্রাম্পও মামদানিকে অবৈধ অভিবাসী বলে উল্লেখ করেছেন, যদিও তার দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ দেননি। অন্যদিকে, ইলন মাস্ককে আরেক স্বাভাবিকীকৃত (নাগরিকত্বপ্রাপ্ত) নাগরিককে বহিষ্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনিও এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আবার সামনে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের ডিন্যাচারালাইজেশন (নাগরিকত্ব বাতিল) কর্মসূচি। আগের প্রশাসনগুলো সাধারণত জঙ্গি, নাৎসি বা যুদ্ধাপরাধীদের লক্ষ্য করত, কিন্তু ট্রাম্পের বিচার বিভাগ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে তারা নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি 'অগ্রাধিকারভিত্তিতে ও সর্বোচ্চ মাত্রায়' অনুসরণ করবে।
এ নিয়ে অভিবাসন আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই নীতি রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে ব্যবহৃত হতে পারে। ইমিগ্রান্ট লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের আইনজীবী এলিজাবেথ তৌফা বলেন, 'এটি যেকোনো সময় রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।'
অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের অভিবাসন আইনজীবী নূর জাফর বলেন, 'এই প্রশাসন রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে মানুষকে টার্গেট করতে পারে এমন বাস্তব হুমকি রয়েছে।' বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা ৮ ইউ.এস.সি. ১৪৫১ অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের কারণে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদ খালিলকে আইসিই ১০০ দিনের বেশি আটক রেখেছিল এবং প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনে যুক্ত থাকার দায়ে তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ককেও দুই মাস আটক রাখা হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন অনেক সময় বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের আপত্তি সত্ত্বেও দ্রুত বহিষ্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে- যেমন ভেনেজুয়েলার কিছু গ্যাং সদস্য বা সালভাডরের কিলমার আব্রেগো গার্সিয়ার ক্ষেত্রে।
১৯৪৫ সালের পর, মূলত নাৎসি ও যুদ্ধাপরাধীদের ধরতেই ডিন্যাচারালাইজেশন ব্যবস্থা গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ৯/১১-পরবর্তী সময়ে, নিরাপত্তা প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে এটি ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত হয়।
ওবামা প্রশাসন 'অপারেশন জানুস' নামের একটি প্রকল্প চালু করেছিল, যাতে ৩ লাখের বেশি সন্দেহজনক ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করা হয়। এর আওতায় প্রথম নাগরিকত্ব বাতিল হয় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০১৮ সালে। ওই ব্যক্তি ছিলেন ভারতের বলজিন্দর সিং, যিনি একসময় বহিষ্কৃত হন কিন্তু পরে ভিন্ন পরিচয়ে আবার নাগরিকত্ব নেন।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম দফায় ১০২টি, বাইডেন প্রশাসন ২৪টি এবং নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ৫টি ডিন্যাচারালাইজেশন মামলা করেছে। এর মধ্যে একটি মামলায় জয় পেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, যেখানে যুক্তরাজ্য থেকে আগত এক ব্যক্তি শিশু পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অপরাধে দোষী ছিলেন।
মোটের ওপর, প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করলেও তাদের মধ্যে মাত্র সামান্য সংখ্যকের বিরুদ্ধেই ডিন্যাচারালাইজেশ বা নাগরিকত্ব বাতিল মামলা হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.