07/17/2025 শুল্ক-বানিজ্য-বানিজ্য বহির্ভূত সব প্রসঙ্গেই চলছে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ আলোচনা
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৬ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৬
বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে একমত হলেও বাণিজ্যের বাইরের বিষয়ে দর-কষাকষিতেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা আটকে আছে। এর মধ্যে এমন কিছু স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে যেগুলোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদের পরামর্শ নিয়ে আগামী সপ্তাহে তৃতীয় দফায় দর-কষাকষির আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে যাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল।
একাধিক ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (গোপনীয়তার চুক্তি) কারণে দর-কষাকষি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছেন না সরকারের উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
৭ জুলাই বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাতে বাংলাদেশি পণ্যে বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করা হয় ৩৫ শতাংশ। এর আগে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে, অন্যথায় ঘোষিত হার কার্যকর হবে। যদিও তিন মাস আগে সব দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেছে দেশটি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন একটি দল ৯ থেকে ১১ জুলাই ওয়াশিংটনে আলোচনা শেষে গত রোববার দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে গত সোমবার বাণিজ্য উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। আশা করছি, বাংলাদেশ তার সক্ষমতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে এবং বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক পর্যায়ে শুল্ক নির্ধারণ করবে। শুল্ক নিয়ে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ছিল উৎসাহব্যঞ্জক ও যথেষ্ট এনগেজিং (হৃদ্যতাপূর্ণ)।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা কেবল বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ভূরাজনৈতিক কৌশলগত বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যার মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশ, যাতে চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে না যায়। যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে মনোযোগী হবে না। এমনকি চীনা বিনিয়োগেও বেশি উৎসাহ দেবে না বাংলাদেশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দর-কষাকষিতে যেসব শর্ত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিনিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্যকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, তা অন্য কোনো দেশকে না দেওয়ার শর্ত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায়, সামরিক কাজে ব্যবহৃত পণ্যসামগ্রী দেশটি থেকে আমদানি করুক বাংলাদেশ। তার বিপরীতে চীন থেকে সামরিক পণ্য আমদানি কমানোর নিশ্চয়তা চায় দেশটি।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। এ ছাড়া মাথার টুপি বা ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা ইত্যাদি বেশি রপ্তানি হয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছে। তাঁদের মতামত পেয়েছি। শিগগিরই আরেকটা বৈঠক হবে আন্তমন্ত্রণালয়ের। এখান থেকেও কিছু মতামত আসবে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাব। আগামী ১ আগস্টের আগেই শুল্ক বিষয়ে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ভালো ফল নিয়ে আসতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.