11/22/2024 শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার অবসান রাশিয়ায়
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৫ জুন ২০২৩ ০৯:০০
দিনভর শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার পর অবশেষে শেষ হলো রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের সশস্ত্র বিদ্রোহ। বেলারুশের মধ্যস্থতায় রুশ সরকারের সঙ্গে ওয়াগনার গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় ক্রেমলিনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছায় ওয়াগনার প্রধান ইভজেনি প্রিগোজিন। কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে এই বিদ্রোহ তুলে নেয়ার কথা জানায় প্রগোজিন। স্থানীয় সময় ২৪ জুন, শনিবার সন্ধ্যায় চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করে ক্রেমলিন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে প্রিগোজিন বেলারুশ চলে যাবেন। ওয়াগনারের কোনো সদস্যকেই বিচারের আওতায় আনা হবে না। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে তারা যে অবদান রেখেছেন তা ভুলে যায়নি রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সবসময়ই ওয়াগনারের অবদানকে সম্মান করেছেন। আর যেসব পিএমসি কন্ট্রাক্টর (ভাড়াটে যোদ্ধা) শনিবারের ওই রাষ্ট্রবিরোধী বিদ্রোহে যোগ দেয়নি তাদের সঙ্গে চুক্তি বজায় রাখবে রাশিয়া। অর্থাৎ, তারা ইউক্রেনে চলমান চুক্তির অধীনে যুদ্ধ করতে পারবেন।
ওয়াগনারের বিদ্রোহের পর গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন মস্কো ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দিমিত্রি পেসকভ।
তিনি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, পুতিন ক্রেমলিনেই আছেন। তিনি কখনই ক্রেমলিন ছেড়ে যাননি।
এর আগে শনিবার রাশিয়ার রোস্তভ অন ডন শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিলিটারি হেডকোয়ার্টার দখল করে ওয়াগনার। এর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।
তবে ওয়াগনারের অনেক সদস্যই মাতৃভূমির বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহে যোগ দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে চুক্তির পর বিদ্রোহ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াগনারের সৈন্যরা রোস্তোভ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
ক্রেমলিনের সঙ্গে চুক্তির পর ওয়াগনার প্রধান তার যোদ্ধাদের ডনবাসে যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্রিগোজিন নিজে বেলারুশে চলে যাবেন। এর মাধ্যমে রাশিয়ায় একটি বিশৃঙ্খল এবং অভাবনীয় দিনের পরিসমাপ্তি হলো।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে ২০১৪ সাল থেকেই ডনবাসের স্থানীয়দের যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধে গত ৯ বছর ধরে যুদ্ধ করছে ওয়াগনার। তবে গত বছর রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালালে ওয়াগনার আরও বৃহৎ পর্যায়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ওয়াগনারে যোগ দেয় ভাড়াটে যোদ্ধারা। ডনবাস অঞ্চলের সোলেদার ও গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহর দখল করে ওয়াগনার।
রুশ বাহিনীর কোনো সহায়তা ছাড়াই তারা ইউক্রেনীয়দের হটিয়ে দেয় বহু গ্রাম ও ছোট শহর থেকে। কিন্তু শনিবারের এক বিদ্রোহে বীর থেকে ভিলেনে পরিণত হলেন প্রিগোজিন।
শনিবার সকালে ওয়াগনারের সৈন্যরা ইউক্রেনে তাদের ফিল্ড ক্যাম্প থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তোভে প্রবেশ করে। শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে তারা আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং মস্কোর উত্তরে আরেকটি শহর ভোরোনেজের সামরিক স্থাপনা দখল করে নেয়।
যোদ্ধারা মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলে, ক্রেমলিন মস্কোসহ অনেক অঞ্চলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করে। মস্কোর মেয়র শহরের বাসিন্দাদের বাইরে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে চলতে বলেন।
তবে চেচেন সেনারা ওয়াগনারকে থামাতে অভিযান শুরু করে। চেচনিয়ার প্রধান রমজান কাদিরভ হাজার হাজার চেচেন সেনাকে মাতৃভূমি রক্ষার নির্দেশ দেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ওয়াগনারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান যে, যারা রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।
তবে শেষ পর্যন্ত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকের পর শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই বিদ্রোহ সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রিগোজিন। এরপরই দেখা যায় ওয়াগনার সৈন্যরা রোস্তোভ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
সূত্র : আল-জাজিরা এবং অন্যান্য
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.