04/19/2025 যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক উত্তেজনার মধ্যেই মালয়েশিয়া সফরে শি জিনপিং
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫৮
মালয়েশিয়ায় তিন দিনের সফরে পৌঁছেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশ সফরের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি কুয়ালালামপুরে পৌঁছান। সফরটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে- চীনই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার। বুধবার (১৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
দীর্ঘ এক দশক পর শি জিনপিংয়ের এই প্রথম মালয়েশিয়া সফর। এর আগে তিনি ভিয়েতনামে সফরকালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে রেল অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি করেছেন। মালয়েশিয়ায় পা রাখার পর প্রেসিডেন্ট শি বলেন, দ্বিপাক্ষিক উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সহযোগিতা শুধু চীন-মালয়েশিয়ার জন্য নয়, বরং এই অঞ্চলের ও বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত চীনের তরফ থেকে আসিয়ান দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে- ওয়াশিংটনের তুলনায় বেইজিংই অধিক বিশ্বস্ত ও লাভজনক অংশীদার।
মালয়েশিয়ার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাজরি আবদুল আজিজ বলেন, এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটা চীনের পক্ষ থেকে একটি কৌশলগত বার্তা- তারা নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার। আমরা কখনোই চীনের সঙ্গে লেনদেনে সমস্যা দেখিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সময়ে মালয়েশিয়া চীনের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন প্রভাব কমে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। চীন বর্তমানে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পণ্যের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মালয়েশিয়া আমদানি করা মার্কিন পণ্যে ৪৭ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে, যদিও মালয়েশিয়া এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন সাময়িকভাবে কিছু দেশের ওপর সর্বোচ্চ শুল্ক প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে। তবে চীনের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে।
চীনের লক্ষ্য এখন ‘আমেরিকাকে বাইপাস’ করে দ্বিপাক্ষিক লেনদেনের মাধ্যমে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা। তাসমানিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া বিষয়ক অধ্যাপক জেমস চিন বলেন, এই সফরের মূল বার্তা—বিকল্প আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চীন অন্যদের সামনে একটি ভিন্ন পথ দেখাতে চায়। তিনি বলেন, চীন এখন এমন একটি লেনদেন পদ্ধতি চালু করতে চাচ্ছে, যেখানে মার্কিন ডলার ছাড়াও স্থানীয় মুদ্রা বা রেনমিনবি দিয়ে বাণিজ্য করা যাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, সফরের তিন দেশের মধ্যে চীনের দৃষ্টিকোণে মালয়েশিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর জনসংখ্যা ৩২ মিলিয়ন, একটি উন্নয়নশীল উচ্চ-প্রযুক্তি খাত রয়েছে এবং বর্তমানে মালয়েশিয়া আসিয়ান গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান।
চীন-মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, বরং বৃহত্তর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রভাব কাঠামোতেও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় চীনা বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপন বাড়ছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.