04/16/2025 ঐক্য, আনন্দ আর শোভাযাত্রায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৪
দেশের ২৮টিরও বেশি সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে এক অনন্য উদ্দীপনায় এবারের বাংলা নববর্ষ, ১৪৩২ উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মূল আয়োজন শুরু হয়। নানা বয়স, শ্রেণি, পেশা ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ প্রভাতেই দলবেঁধে রঙিন পোশাক পরে চারুকলা অনুষদের এ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়।
এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে যুক্ত হয়েছে ঘোড়দৌড় প্রদর্শনী, সুলতানি ও মোগল আমলের মুখোশ, ঐতিহ্যবাহী পটচিত্র, ইলিশ মাছ, ৩৬শে জুলাই-এর প্রতীকী চিত্র ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ নতুন নানান মোটিফ।
সকাল ৯টায় ‘নববর্ষের স্লোগান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু আনন্দ শোভাযাত্রা।
এতে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ কৃষক, বাঙালি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরাও অংশ নেন। শোভাযাত্রায় নানান শ্রেণি পেশার মানুষের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
শোভাযাত্রার শুরুর দিকে ছিল পুলিশের ১৮টি ঘোড়া দিয়ে সজ্জিত একটি বহর। এরপরই ছিল ২৮টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা নিজ নিজ সাংস্কৃতিক গান ও নৃত্যের মাধ্যমে শোভাযাত্রাকে রঙিন করে তুলেছিলেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্যরাও এই শোভাযাত্রায় যোগ দেন।
আনন্দ শোভাযাত্রার মূল ব্যানারটি বহন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, প্রক্টর অধ্যাপক সাইফউদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার মুনশি শামস উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।
শোভাযাত্রার মূল অংশে ছিল হাতে তৈরি ঘোড়ার দল, ব্যান্ড দল ও ঘোড়ার গাড়ি। শোভাযাত্রার শেষ প্রান্তে ছিল ছোট-বড় নানা মোটিফ। এবারের শোভাযাত্রার সাতটি বড় মোটিফের মধ্যে ছিল: ফ্যাসিবাদী মুখ, শান্তির প্রতীক পায়রা, তরমুজের ফালি, ইলিশ মাছ, বাঘ, ৩৬শে জুলাই ও শহীদ মীর মুগ্ধর পানির বোতল।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘ফ্যাসিস্ট মুখ’ প্রতীকটি শনিবার সকালে এক দুষ্কৃতকারীর আগুনে পুড়ে গেলেও তা এক দিনের মধ্যেই পুনরায় তৈরি করা হয়। এটি দীর্ঘকালীন ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবেই ধরা পড়ে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া অনেকে জানান, এবারের নববর্ষ উদযাপন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে, যেখানে সকল শ্রেণি-পেশার ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়েছেন এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ ঘটেছে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী আসিফুর রহমান বলেন, তিনি মিরপুর-২ থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এবারের এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে এসেছেন।
তিনি বলেন, এবারের শোভাযাত্রায় আমরা নিজেদের সংস্কৃতি আর অবদান তুলে ধরছি। একান্তভাবে আমরা এই বৈপ্লবিক নববর্ষ উদযাপনের অংশ হতে এসেছি। আশা করি, এভাবে আমাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
ওয়াসি তাহমিদ বলেন, আমরা এতদিন যে সংস্কৃতির মধ্যে ছিলাম, সেটা মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙালি সংস্কৃতি। এবার আমরা আমাদের শিকড়ে ফিরে আসছি। উৎসবগুলো পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে এবং মানুষও তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, এবারের ঈদ যেভাবে মানুষ একসঙ্গে পালন করেছে, পহেলা বৈশাখও তার কাছে ঈদের মতোই আনন্দের অনুভূতি তৈরি করেছে।
নববর্ষের প্রথম দিনটি ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ ঐতিহাসিক বটতলায় বাংলা ধ্রুপদী সংগীতের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এর পাশাপাশি, চারুকলা অনুষদের মাঠে ‘যাত্রাপালা’, গান ও সাংগীতিক পরিবেশনার জন্য আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জাও করা হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.