11/22/2024 ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা : বাড়ছে অস্থিরতা
মুনা নিউজ ডেস্ক
২০ জুন ২০২৩ ১১:৫২
সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্মভিটা ছেড়ে বাংলাদেশে ঢল নামতে শুরু করে রোহিঙ্গাদের। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রাচুর্য ছিল। কিন্তু ক্রমে তা কমতে শুরু করে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়তে থাকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। মাদক চোরাচালান, হত্যাকাণ্ড, মানবপাচারসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য হুমকি বাড়তে থাকায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ২০১৭ সাল থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। তবে ভূ-রাজনীতির ডামাডোলে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে আসছে সরকার।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে চলছে তীব্র অর্থ সংকট। ক্যাম্পে দিন দিন বাড়ছে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার পাশাপাশি বরাদ্দ কমিয়েছে জাতিসংঘ। এ কারণে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে ক্যাম্পগুলোতে।
তিন মাসের ব্যবধানে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি দুই দফা অর্থ বরাদ্দ কমিয়েছে। এ বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের জন্য জনপ্রতি মাসিক বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। সর্বশেষ গত ১ জুন থেকে ওই বরাদ্দ আরও কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছে।
দেশীটর উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মাস্টার জোবাইর বলেন, “সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বরাদ্দ কমে এসেছে। রোহিঙ্গারা আগে যে পরিমাণ রেশন পেতেন এখন তা পাচ্ছেন না। এতে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্যাম্পে নানা অপরাধের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশি পরিবারগুলোতেও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে।”
কুতুপালং ক্যাম্পের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, “এখন যে রেশন দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। ফলে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ক্যাম্পের বাইরে কাজ করতে যেতে হয়। যাদের ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে আয় করার মতো লোক নেই, তাদের সংসারে তীব্র অর্থ কষ্ট দেখা দিয়েছে।”
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. হেলাল উদ্দিন জানান, “খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে। কাজের সন্ধানে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।”
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অস্থিরতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন মো. মিজানুর রহমান বলেন, “খাদ্য বরাদ্দ কমানোর ফলে রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাড়বে অপরাধও। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যা সমাধান জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে মিয়ানমারকে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে এ পর্যন্ত যাছাই-বাছাই করেছে মিয়ানমার।”
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.