03/10/2025 ১৬ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমামের দায়িত্বে ফিরলেন মুফতি ছাইফুল্লাহ
মুনা নিউজ ডেস্ক
৫ মার্চ ২০২৫ ২০:০২
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ও ইমামের দায়িত্বে ফিরেছেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। রোববার (২ মার্চ) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ঈদগাহ ময়দান কমিটির মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে তাকে ইমামতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর পুনরায় দায়িত্বে ফিরলেন তিনি।
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ জেলাবাসীসহ মুসল্লিদের দাবি অনুযায়ী ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সাবেক ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে পুনরায় ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তাকে সরিয়ে দেন। পাশাপাশি ইমাম নিয়োগে মোতাওয়াল্লির অধিকারকেও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওয়াকফ দলিলের তোয়াক্কা না করে তৎকালীন জেলা প্রশাসন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান বিতর্কিত ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়। সে সময় এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসন বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের দাবি পূরণ হয়েছে আজ। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের মানুষের প্রাণপুরুষ ছিলেন মাওলানা নুরুল্লাহ। তিনি ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে ইমামতি করেছেন দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময় তার ছেলে মুফতি ছাইফুল্লাহকে ইমাম হিসেবে মনোনীত করা হয়। তিনি খুবই সুনামের সঙ্গে সবার সন্তুষ্টি অর্জন করেই ইমামতি করে আসছিলেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় আওয়ামী লীগ সরকার হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা, অফিস-আদালত দখলের পাশাপাশি মসজিদ-মাদরাসা এমনকি ঈদগাহকেও ছাড় দেয়নি। তারা যোগ্য ও বৈধ ইমাম মুফতি ছাইফুল্লাহকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে বিতর্কিত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম মনোনীত করেছিল। আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে পুনরায় ইমাম হিসেবে মুফতি ছাইফুল্লাহকে নিয়োগ দেওয়ায় জেলাবাসীর ঋণ কিছুটা হলেও কমবে।
শোলাকিয়া ঈদগাহের মোতাওয়াল্লি দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান মঈন বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহের ওয়াকফ দলিল অনুযায়ী ঈদগাহের ইমাম ও ঈদের জামাতের সময় নির্ধারণ করার কথা মোতাওয়াল্লির। কিন্তু বিগত দিনে মোতাওয়াল্লির সেই ক্ষমতাকে কেড়ে নিয়ে অন্যায়ভাবে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মোতাওয়াল্লির মনোনীত মুফতি ছাইফুল্লাহকে ইমাম হিসেবে পুনর্বহাল না করে আওয়ামী সরকারের ইশারায় তখন ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে নিয়োগ দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ আত্মগোপনে আছেন। এছাড়া গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার তাকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহর আগে তার বাবা মাওলানা এ কে এম নূরুল্লাহ টানা ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহের অবৈতনিক ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে পরিবর্তন করার জন্য দাবি ওঠে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছিল অনেকেই। তাদের দাবি ছিল চাপিয়ে দেওয়া ইমামকে অবিলম্বে সরিয়ে মোতাওয়াল্লি কর্তৃক নিযুক্ত আগের ইমাম সর্বজন প্রশংসিত মুফতি আবুল খায়ের মো. ছাইফুল্লাহকে আবারও ইমামের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া। অবশেষে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তা বাস্তবায়ন করা হলো।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.