অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি এবং সেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।

হাতিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে রাজধানীর মিন্টো রোডে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাড়ি ঘেরাও করতে জড়ো হওয়া লোকজনের সামনে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টার দিকে এ কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। সে সময় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন,“পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকানোর ও দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, এই বিষয়টা আমরা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। হামলা করার মতো ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের অ্যারেস্ট করার ব্যাপারে আগামীকালকের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এই নিশ্চয়তা আমি আপনাদের দিতে চাই।”

এসময় উপস্থিত জনতা অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানালে তিনি বলেন, “গণ অভ্যুত্থানের সময় থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে। সেসময় পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণে ক্ষোভবশত পুলিশের সঙ্গে অনেক জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অস্ত্র লুট করেছে এবং আওয়ামী লীগের সময় ১৬ বছরে যাদেরকে রা্জনৈতিকভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তাদের অনেকেই অস্ত্র জমা দেয়নি।”

উপদেষ্টা আরও বলেন, “লাইসেন্স দেওয়া অস্ত্র বেশিরভাগই পুলিশ জমা নিয়েছে, কিন্তু লুট হওয়া অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকানোর ও দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, এই বিষয়টা আমরা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।”

অস্ত্র উদ্ধারে প্রথমদিকে টাস্কফোর্সের যে অভিযান হয়েছিল তা আবারও শুরুর কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “পুনরায় সম্মিলিত যৌথবাহিনীর অভিযান আবার পরিচালনা এবং যে অস্ত্রগুলো বাইরে আছে সেগুলো দ্রুত উদ্ধার করার জন্য আমরা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেব। এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, কোনো পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি যদি এই দেশের জনগণের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।”

আসিফ মাহমুদ বলেন, “যারা এখন বিভিন্ন জায়গায় অনভিপ্রেত পরিস্থিতির চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। কালকে থেকে আপনারা এর ফলাফল দেখতে পাবেন। আপনারা জানেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ফ্যাসিবাদের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই কোথাও কোনো আসামি থাকলে, অস্ত্র থাকলে সেই তথ্য আমাদের দিয়ে আপনারা সহায়তা করুন। জানামাত্রই আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।”

ফেব্রুয়ারি মাসে ডাকা আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “এ পর্যন্ত যারাই উস্কানিমূলক মিছিল বের করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৫ জন, ২০ জনের যারা মিছিল বের করেছে, দুই-তিনদিনের মধ্যে এর যারা মূল অর্গানাইজার, তাদের কিন্তু গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”

উপস্থিত একজন অভিযোগ করেন, প্রতিটি থানায় এখন ঘুষ-তদ্বির বাণিজ্য চলছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “এটাতো মনস্তাত্বিক সমস্যা। এটাকে ১৬ বছরের সমস্যা বলব না, এই ঘুষের সমস্যা এটা তো ৫৩ বছরের সমস্যা, ব্রিটিশ পুলিশের সমস্যা। এই সমস্যা আমরা চাইলেই ওভারনাইট পরিবর্তন করতে পারব না।

“তবে সংস্কার কমিশনগুলো যে রিপোর্ট দিয়েছে সেগুলোতে আপনারা জানেন। সেই রিপোর্টের বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি পুলিশ আর কখনো দলদাসে পরিণত হবে না, পুলিশ জনগণমুখী হবে। ঠিকমতো কাজ করছে না, সেজন্য ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করবে পুলিশ, যাতে প্রশাসন ঠিকমতো কাজ করতে বাধ্য থাকে।”