01/23/2025 ইন্দোনেশিয়ায় সরকারি কর্মচারীদের বহুবিবাহে কঠোরতা
মুনা নিউজ ডেস্ক
২২ জানুয়ারী ২০২৫ ১৬:১১
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার সরকারি পুরুষ কর্মচারীদের জন্য বহুবিবাহ নিয়ে একটি সাম্প্রতিক ডিক্রি নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। তবে সমালোচকেরা বহুবিবাহকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। কারণ তারা মনে করেন, এটি নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং ক্ষতিকর।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত ৬ জানুয়ারি জাকার্তার অস্থায়ী গভর্নর তেগুহ সেতিয়াবুদি একটি নিয়ম জারি করেছেন। এর মাধ্যমে দেশটির ১৯৭৪ সালের বিয়ের আইনের অধীনে থাকা বহুবিবাহের শর্তগুলো পুনর্ব্যাখ্যা ও কঠোর করা হয়েছে।
নতুন ডিক্রি অনুযায়ী, সরকারি পুরুষ কর্মচারীদের প্রথম স্ত্রী যদি বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তবে অবশ্যই মেডিকেল সনদ দেখাতে হবে। ১০ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পরও যদি প্রথম স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হন তবে তাঁর বন্ধ্যত্বের প্রমাণ দিতে হবে।
এ ছাড়া প্রথম স্ত্রীর অনুমতিই শুধু নয়, আরেকটি বিয়ে করার জন্য আদালতেরও অনুমোদন নিতে হবে।
এই ডিক্রিকে শহরের উচ্চ বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমানোর প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে জাকার্তা এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি। এই সংস্থাটি সরকারি কর্মচারীদের বিষয়গুলো তদারকি করে।
এদিকে, এই ডিক্রি নিয়ে মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং লিঙ্গ সমতার প্রচারকেরা তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, এই ধরনের নিয়ম পিতৃতান্ত্রিক সমাজকে মজবুত করে, নারীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে এবং তাঁদের প্রতি সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়া এই ডিক্রিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক উসমান হামিদ বলেন, ‘বহুবিবাহ নারীদের প্রতি বৈষম্যের একটি রূপ। কারণ এটি দাম্পত্য সম্পর্কে অসমতা সৃষ্টি করে।’
নারীদের অধিকার রক্ষায় বিদ্যমান আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে বহুবিবাহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান উসমান।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় নারী কমিশন (কমনাস পেরেম্পুয়ান) বহুবিবাহ বিষয়ক শর্তগুলোকে পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বলেছে, ‘এই শর্তগুলো নারীদের অধস্তন অবস্থানে রাখে এবং তাদের গৃহস্থালির দায়িত্বের প্রতি এককভাবে দায়বদ্ধ করে তোলে।’
কমনাস পেরেম্পুয়ান আরও জানায়, বহুবিবাহের কারণে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা মানসিক অবহেলার শিকার হন, যা পারিবারিক সহিংসতার একটি সাধারণ রূপ।
জনগণের মধ্যে এই ডিক্রি নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জননীতি বিশ্লেষক আছমাদ নুর হিদায়াত। তিনি বলেন, ‘এই ডিক্রি বহুবিবাহকে উৎসাহিত করার জন্য নয়, বরং এর প্রক্রিয়া আরও কঠিন করার জন্য তৈরি।’
দেশটির জাতীয় নারী কমিশনের কমিশনার সিতি আমিনাহ তারদি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়েগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হয় না, যা এই ধরনের বিবাহে থাকা নারী ও তাদের সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।’
সমালোচকেরা বলছেন, এই ডিক্রি বহুগামিতার অন্তর্নিহিত সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ এবং এটি বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্যকে আরও প্রকট করতে পারে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.