12/12/2024 সাবধান! আমাদের পরকাল বিনষ্ট করে দিতে পারে অন্যের হক
মুনা নিউজ ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫০
নশ্বর এই পৃথীবিতে চলতে গেলে যেসকল বস্তুর আমরা মুখাপেক্ষী হই তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল, পরস্পরের প্রয়োজনীয়তা। এই প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন ভাবে পূরণ হয়ে থাকে। বিশেষত উল্লেখযোগ্য বলতে গেলে বলতে হয় লেনদেনের কথা। পরস্পর লেনদেন হয় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। জীবনের তাগিদে আমরা একে অপরের দারস্থ হই।
এবং অন্য ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে নবীজি সা. তাগিদ দিয়েছেন। বিশেষ করে এর ফযীলতের কথা উল্লেখ করে নবীজি সা. এরশাদ করেন, হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকেই বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের কষ্ট মোচন করে দিল, আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন তাকে পুরসিলাতের উপর এমন দু’টি নূরের আলোকচ্ছটা দান করবেন যার আলোতে বিপুল জনগোষ্ঠী পথ চলবে, যাদের সঠিক সংখ্যা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। (আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব, হাদীস নং ১৩৫০।)
অন্য বর্ণনায় আসছে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব কোন বিপদ–আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভূত করবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোন মূসলমানের ক্রটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ক্রটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাই এর সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন। (সহীহ মুসলীম হাদীস নং ৬৬০৮।)
কিন্তু বর্তমান সমাজে নামাজী, হাজ্বী, বিশিষ্ট দানবীরদের অভাব না থাকলেও লেনদেনে স্বচ্ছ মানুষের খুবই অভাব। চলার পথে মানুষের সাথে কথা বললে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। লেনদেনে অস্বচ্ছ ব্যাক্তিরা নিচের দুটি হাদিসের প্রতি লক্ষ্য করুন।
১, হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা যুলুম। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪০০)
হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির রূ্হ্ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সাথে বন্ধক থাকে। জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১০৭৯ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
সুতরাং উপরোক্ত হাদিস দ্বয়ের মাধ্যমে বুঝা যায়, অন্যের পাওনার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া চাই।
আমাদের আকাবীর আসলাফদের পদ্ধতি ছিলো, তারা কারো কাছে পাওনা থাকলে তা লিখে রাখতেন। এবং দেওনা থাকলে তাও লিখে রাখতেন। এবং এটিই কোরআন সুন্নাহের পদ্ধতি।
অন্যের হক আমার কাঙ্ক্ষিত পথ রুদ্ধ করবে না তো
বর্তমানে সমাজের আনাচে কানাচে ভূমিদস্যু হতে নিয়ে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হওয়া মানুষের অভাব নাই। কিভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা যায় সেই ফিকিরেই ব্যাস্ত। অথচ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামুল্লায় এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। (সূরা নিসা ২৯)
হাদিস শরিফে এসেছে, আদি ইবন আমিরা আল-কিন্দি রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আমি যাকে তোমাদের কোনো কাজের দায়িত্বশীল করি, অতঃপর সে সুচ পরিমাণ বস্তু বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আত্মসাৎ করল, সেটাই হবে খিয়ানত। কিয়ামতের দিন সেই বস্তু নিয়ে সে উপস্থিত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৩৩)
পরিশেষে নবীজীর সুন্নাহ অনুযায়ী আমরা লেনদেনে স্বচ্ছ হওয়ার মানসে সর্বদা অন্যের হক্ব সম্পর্কে সতর্ক থাকবো। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুক। আমীন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.