11/28/2024 মিথ্যা অভিযোগে ৩০ বছর জেলে থাকার পর পেলেন ১৫৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ!
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৫
প্রায় তিন দশক কারাগারে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা মাইকেল সুলিভান। জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর মা এবং চার ভাইবোন মারা গেছেন। জীবন থেকে চলে গেছেন প্রেমিকাও। আর কারাগারের ভেতর তিনি একাধিকবার মারাত্মক আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন।
বুধবার অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, যে অপরাধের জন্য সুলিভান জীবনে এত ত্যাগ স্বীকার করলেন, সেই অপরাধ তিনি কখনোই করেননি!
চলতি মাসের শুরুর দিকেই বর্তমানে ৬৪ বছর বয়সী সুলিভান ন্যায় বিচার পাওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। ম্যাসাচুসেটসের একটি জুরি তাঁকে ১৯৮৬ সালের উইলফ্রেড ম্যাকগ্রাথের হত্যাকাণ্ড এবং ডাকাতির অভিযোগ থেকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, সুলিভানকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ ১৫৫ কোটি টাকারও বেশি।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী—মিথ্যা অভিযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে সুলিভান এত বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন যে, তাঁর বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে উইলফ্রেড ম্যাকগ্রাথকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল সুলিভানকে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতির সময় ম্যাকগ্রাথকে মারধর করে একটি পরিত্যক্ত সুপারমার্কেটের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সুলিভানকে সন্দেহ করা হয়েছিল। কারণ হত্যার আগের রাতে তাঁর বোন ম্যাকগ্রাথের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পাশাপাশি তাঁর শেয়ার করা অ্যাপার্টমেন্টেও সময় কাটিয়েছিলেন। মামলাটিতে গ্যারি গ্রেস নামে আরও এক সন্দেহভাজন ছিলেন। তবে গ্রেস সুলিভানকে অভিযুক্ত করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।
মামলাটিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছিল সেই সময়ের রাজ্য পুলিশের এক রসায়নবিদের সাক্ষ্য। আদালতে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সুলিভানের জ্যাকেটে রক্ত এবং ম্যাকগ্রাথের চুলের মতো একটি চুল পাওয়া গেছে। এই সাক্ষ্যটি সুলিভানকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য অন্যতম ভিত্তি ছিল।
কারাগারের ভেতর সুলিভানের জীবন ছিল দুঃসহ। এক আক্রমণে তাঁর নাক প্রায় ছিঁড়ে গিয়েছিল। আরেক হামলায় তাঁর একটি কান হারানোর উপক্রম হয়েছিল। দীর্ঘমেয়াদি বন্দী হওয়ায় কারাগারের ভেতর কোনো প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁকে।
কারাগারের ভেতর নিজের অনুভূতির বর্ণনা দিতে গিয়ে সুলিভান বলেন, ‘যখন আপনি জানেন যে আপনি নির্দোষ, তখন এই জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে।’
২০১১ সালে সুলিভানের আইনজীবী একটি ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেছিলেন। এই পরীক্ষায় দেখা যায়, সুলিভানের জ্যাকেটে কোনো রক্ত ছিল না এবং কথিত ওই চুলে ম্যাকগ্রাথের ডিএনএ-এরও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ফলে ২০১২ সালে নতুন করে মামলাটি বিচারের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পরের বছরই সুলিভান মুক্তি পেয়েছিলেন। মুক্তি পাওয়ার দীর্ঘ এক যুগ পর এবার ক্ষতিপূরণও পেলেন তিনি।
এপি জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়ার পরও সুলিভান স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেননি। কারণ তত দিনে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। প্রযুক্তির জগতে তিনি একদমই নতুন ছিলেন। আর কাজ খোঁজার মতো দক্ষতাও ছিল না তাঁর। তিনি এখন তাঁর বোন ডোনা ফারিয়ার সঙ্গে থাকেন এবং বোনের পরিবারের ছোটখাটো কাজে সাহায্য করেন।
নিজের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সুলিভান বলেন, ‘আমি এখনো বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি। আমি খুব বেশি বাইরে যাই না। সব সময় ভীত থাকি।’
এবার ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে সুলিভান একটি ট্রাক কিনতে চান এবং বাকি টাকা তাঁর ভাই-বোনদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে চান। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমার ভাগনে-ভাগনিদের দেখাশোনা করা। ওরা ভালো থাকলে আমি খুশি হব।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.