11/28/2024 মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৯
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) মিয়ানমারের সামরিক প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছে। মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
আইসিসি'র প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান এ আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বাসন ও নিপীড়নের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী।
আইসিসি'র হিসাব অনুযায়ী, ওই সহিংসতার ফলে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা জোরপূর্বক মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়। আর বিতাড়িত অধিকাংশ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে।
মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী তাতমাদাওয়ের প্রধান। ২০২১ সালে এই বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে তিনি দেশের সামরিক শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মিয়ানমারের সহিংসতায় ২০১৯ সাল থেকে চলমান তদন্তে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী তাতমাদাও, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং কিছু বেসামরিক নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে করিম খান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন।
তবে মিয়ানমার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। দেশটির দাবি, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
করিম খান বাংলাদেশে কক্সবাজার সফরকালে একাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, শরণার্থীরা তার কাছে ন্যায়বিচারের জন্য আন্তরিক আবেদন জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন এখনো আইসিসি'র বিচারকদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই এটি কার্যকর হবে।
তবে মিয়ানমার আইসিসি'র ১২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত নয়, ফলে পরোয়ানা কার্যকর করতে আদালতের এখতিয়ার সীমিত হতে পারে। তবে পরোয়ানা জারি হলে, কোনো সদস্য রাষ্ট্রে মিন অং হ্লাইং প্রবেশ করলে ওই দেশ তাকে আইসিসি'র হেফাজতে হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে।
করিম খান জানান, আদালত আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আরও আবেদন দাখিল করা হবে।
তিনি বলেন, "আমরা আমাদের সব অংশীদারের সঙ্গে মিলে প্রমাণ করব যে রোহিঙ্গারা ভুলে যায়নি। বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো তারাও আইনের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখে।"
করিম খানের আবেদনের প্রশংসা করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) একে দায়বদ্ধতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং "দীর্ঘদিনের দায়মুক্তির অবসান ঘটানোর উদ্যোগ" বলে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘের আগের তদন্তে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দেশটির জেনারেলদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকার হাইকমিশনার জেইদ রা'দ আল হুসেইন বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযান জাতিগত নির্মূলের আদর্শ উদাহরণ বলে মনে হয়।
২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) একটি প্রাথমিক আদেশ জারি করে, যাতে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রতিরোধে বাধ্য করা হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.