11/26/2024 যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অন্যদের সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক
মুনা নিউজ ডেস্ক
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৮
লাওসে নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিভাগের ওপর চীনের দাবি ক্রমশই বাড়ায় এলাকাটি সংঘাতের দিকে চলে যাচ্ছে।
এই রুদ্ধ দ্বার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুন একই কক্ষে ছিলেন। এর ঠিক একদিন আগেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে, অস্টিনের সাথে দেখা করার একটি অনুরোধ দং প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সামরিক বাহিনীর সাথে সামরিক বাহিনীর ক্ষয়িষ্ণু সম্পর্ককে উন্নত করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং অস্টিন, দং-এর সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করে এটি ‘গোটা অঞ্চলের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা’ বলে অভিহিত করেন।
চীনের একটি বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেয়া হয় তাইওয়ানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপ সম্পর্কে চীন অসন্তুষ্ট। স্ব-শাসিত এই দ্বীপটিকে চীন নিজের অংশ বলে দাবি করে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি তাইওয়ানে সর্বাধুনিক ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ দুই লাখ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ চিয়ান বৃহস্পতিবার অনলাইনে একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের মূল আগ্রহকে যুক্তরাষ্ট্র অবজ্ঞা করতে পারে না অথচ কিছু্ই হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে চীনের সামরিক বাহিনীর সাথে মতবিনিময় করছে।’
চীনের সাথে সমুদ্রে বিবাদ যখন বাড়ছে ওই সময়ে আসিয়ান বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো আমেরিকান প্রশাসনের পরিবর্তনের বিষয়ে চিন্তিত।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ নীতির জন্য দৃঢ়ভাবে চাপ দিয়েছে এবং এটা এখনো পরিস্কার নয় যে দক্ষিণ চীন পরিস্থিতি সম্পর্কে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসন কি ভাবছে।
চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, দং বিবাদে উস্কানি না দিয়ে কিংবা বাইরের শক্তিকে না আনিয়ে সংলাপের মাধ্যমে বিষয়গুলোর সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
বেইজিং মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কারণে ফিলিপাইন চীনের সাথে দক্ষিণ চীন সাগরের বিবাদে আরো দৃঢ় অবস্থান নেয়ার সাহস পেয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাইরে আসিয়ান সম্মেলনে অন্য যেসব দেশ যোগ দিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। আসিয়ান সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের এসব বৈঠকে আশা করা হচ্ছে, তারা কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের দিকেও নজর দিবেন।
লাওসে রওনা দেয়ার আগে অস্টিন অস্ট্রিলিয়ায় সে দেশের কর্মকর্তা এবং জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে তার বৈঠক শেষ করেন। তারা আসিয়ানকে সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং ‘ফিলিপাইন ও অন্য উপকূলীয় জাহাজের বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্র চীনের বিপজ্জনক আচরণসহ পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’
ফিলিপাইনসহ, আসিয়ান সদস্য ভিয়েৎনাম, মালায়েশিয়া ও ব্রুনেইরও দক্ষিণ চীন সাগরের উপর দাবি রয়েছে যার প্রায় পুরোটাকেই বেইজিং তার নিজের অঞ্চল বলে দাবি করে।
ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, ক্যাম্বোডিয়া ও লাওস ও আসিয়ানের সদস্য। আর আসিয়ান হচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশানস।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তার আঞ্চলিক দাবি জানাতে আরো জোর খাটাচ্ছে বলে সমুদ্রে যথার্থ আচরণের লক্ষ্যে চীন ও আসিয়ান একটি আচরণ বিধির জন্য আলোচনা করছে।
কর্মকর্তারা ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই আচরণ বিধি সম্পন্ন করতে সম্মত হয়েছেন কিন্তু এই চুক্তি বাধ্যতামূলক হবে কি না এমন কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনায় বিঘ্ন ঘটছে।
চীনা ও ফিলিপাইনের জাহাজগুলো এ বছর বারবার সংঘাতে লিপ্ত হয় এবং অক্টোবরে ভিয়েৎনাম এই অভিযোগ করে যে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত এলাকায় চীনা বাহিনী তাদের মৎস্য-শিকারিদের ওপর আক্রমণ করেছে। চীন তাদের টহলদার জাহাজগুলোকে ওই সব এলাকায় পাঠিয়েছে যেগুলোকে মালায়েশিয়া তাদের একান্ত নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে দাবি করে।
আরেকটি দূরহ আঞ্চলিক বিষয় হচ্ছে আসিয়ান সদস্য মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও মানবিক সঙ্কট। মিয়ানমারের যুদ্ধে এই গোষ্ঠীটির বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মক পরীক্ষার সম্মুখীন হয় যেখানে সেনাবাহিনী ২০২১ সালে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে এবং সেখানে গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা এবং জাতিগোষ্ঠীগত বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই অব্যাহত আছে।
তিনটি মিলিশিয়া গোষ্ঠী এবং তাদের সাথে যুক্ত প্রতিরোধী গোষ্ঠিগুলোর সাথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই চলছে, পর্যবেক্ষকরা অনুমান করছেন সেনাবাহিনী দেশটির অর্ধেকেরও কম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের আসিয়ানের বৈঠকগুলোতে যোগদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে এ বছর সে দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যুরোক্র্যাটরা যোগ দেন, তারা অক্টোবরের শীর্ষ সম্মেলনেও ছিলেন।
প্রতিরক্ষাবিষয়ক বৈঠকে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক পরিচালক জাও নাইং উইন।
সূত্র : ভিওএ
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.