11/14/2024 ট্রাম্পের জয়, যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় হয়েছে ‘পুরুষ বয়কট’ আন্দোলন
মুনা নিউজ ডেস্ক
৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১১
যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। আর এই শঙ্কা বা উদ্বেগ থেকে পালে নতুন করে হওয়া পেয়েছে নারীদের পুরুষবিরোধী আন্দোলন ‘ফোর বি’। ফরাসি সংবাদমাধ্যম–এর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ফোর বি আন্দোলনের সূত্রপাত এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। মূলত কট্টরপন্থী নারীবাদীরা এই আন্দোলন শুরু করেছিল পুরুষের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা লক্ষ্য নিয়ে। পরে এই আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলন ‘ফোর নো’ নামেও পরিচিত। এই ফোর নো হলো—নো ডেট উইথ মেন, নো ম্যারিজ, নো সেক্স ও নো গিভিং বার্থ। অর্থাৎ, এই আন্দোলন পুরুষের সঙ্গে নারীর ডেটিং, প্রেম, যৌনতা ও সন্তান জন্মদান প্রত্যাখ্যান করে।
কিছু নারীদের আশঙ্কা, রিপাবলিকান পার্টির মতাদর্শ অনেক বেশি ‘কনজারভেটিভ’ বা রক্ষণশীল হওয়ায় তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে সংকুচিত হতে পারে। আর এই আশঙ্কা থেকেই তাঁরা আগেভাগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ‘ফোর বি’ আন্দোলন শুরু করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একটি পোস্টে নারীদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘হে নারীরা, আমাদেরও দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের মতো ফোর বি আন্দোলন শুরুর কথা বিবেচনা করতে হবে এবং আমেরিকার জন্মহার ব্যাপক হ্রাস করতে হবে। বিয়ে নয়, সন্তান জন্ম নয়, পুরুষদের সঙ্গে ডেটিং নয় এবং পুরুষদের সঙ্গে কোনো যৌন সম্পর্ক নয়। আমরা পুরুষদের বিজয়ের হাসি হাসতে দিতে পারি না...আমাদের মরণ কামড় দিতে হবে।’
এই পোস্ট শেয়ারের পর ২ কোটি ভিউ হয়ে ৪৮ ঘণ্টায় এবং এই সময়ে প্রায় ৫ লাখ রিঅ্যাকশন পড়েছে এতে। এক্স ছাড়াও অপর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকেও এ–সংক্রান্ত অনেক কনটেন্ট শেয়ার হয়েছে। সেগুলোও লাখ লাখ ভিউ হয়েছে। টিকটকে শেয়ার করা একটি কনটেন্টের ভিউ হয়েছে ৩৬ লাখ। সেই কনটেন্টে বলা হয়েছে, ‘নারীরা, সময় এসেছে সব পুরুষকে বয়কট করার! আপনি আপনার অধিকার হারিয়েছেন এবং তারা (পুরুষেরা) আমাদের আঘাত করার অধিকার হারিয়েছে! ফোর বি আন্দোলনই এখনই শুরু করার সময়!’
যেভাবে শুরু এই আন্দোলন
ফোর বি—আন্দোলনটি ২০১৯ সালে শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। বিশ্বজুড়ে যখন যৌন হয়রানি বিরোধী ‘মি ঠু’ আন্দোলন তীব্র তখন এই ‘ফোর বি’ আন্দোলন শুরু হয়। মূলত, দক্ষিণ কোরিয়ায় গোপনে নারীদের ভিডিও ধারণের প্রতিবাদে এই আন্দোলন শুরু হয়।
রেডিশ ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং ফোর বি—আন্দোলনের প্রবক্তা বেক গেউল বলেন, ‘কোরীয় নারীরা নিজেদের সুন্দর দেখানোর জন্য অনেক কষ্ট করেন। চাকরিতে লম্বা চুল রাখা, মেকআপ করা, নির্দিষ্ট ওজন বজায় রাখা, ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলানো এবং নিয়মিত চুলের স্টাইল পরিবর্তনের চাপ থাকে। ফোর বি আন্দোলন মূলত এমন চেষ্টাগুলো বন্ধ করার মাধ্যমে এটি বুঝিয়ে দেওয়া যে নারী যৌন আকাঙ্ক্ষার বস্তু নয়।’
এই আন্দোলন দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের বার্তা বহন করলেও দেশটিতে এরই মধ্যে বেশ বিতর্কের মুখে পড়েছে এটি। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল মন্তব্য করেন, নারীবাদ ‘পুরুষ ও নারীর মধ্যকার স্বাস্থ্যকর সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করছে।’
অনেকে মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মহার কমে যাওয়ার পেছনে এই আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। লিঙ্গ ভূমিকা ও নারীবাদী আন্দোলনগুলো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফোর বি আন্দোলনের সমর্থক সংখ্যা ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে অনুমান করা হয়। তবে, অনলাইন ও অফলাইন উপস্থিতির অস্পষ্টতার কারণে এই আন্দোলনের সমর্থকদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.