11/09/2024 প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নজিরবিহীন ভোটার জালিয়াতির অভিযোগ
মুনা নিউজ ডেস্ক
৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০৭
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বিভ্রান্তিকর সব অভিযোগ এবং ভোটার ও ভোট জালিয়াতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য অনলাইনে নজিরবিহীন মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে। কথিত এই অনিয়মের অভিযোগের ঘটনাগুলো ছড়াচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ স্বতন্ত্র ও রিপাবলিকান-সমর্থক গোষ্ঠীগুলো। তবে ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকেও অল্প সংখ্যক পোস্ট আসছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া জালিয়াতি, অনিয়মের অভিযোগের এই ঝড় নির্বাচনি কর্মকর্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে গুজব মোকাবিলাসহ ভোটারদেরকেও আশ্বস্ত করতে হচ্ছে।
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনলাইন পোস্টগুলোতে রিপাবালিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা-শিবিরের মিথ্যা দাবিকে সমর্থন জানানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে,সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছিলেন। এবার ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে তাকে আবারও প্রতারণা করে পরাজিত করা হতে পারে।
২০২৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সময় বলেছিলেন, যদি ‘সুষ্ঠু ও বৈধ এবং ভাল নির্বাচন’ হয় তাহলে তিনি ফল মেনে নেবেন।
অথচ সোমবার প্রকাশিত সিএনএন-এসএসআরএসের জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন ট্রাম্প পরাজিত হলে ফল প্রত্যাখ্যান করবেন।
চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প নিজেই দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভেনিয়ায় ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, আমরা তাদেরকে পেনসিলভেনিয়ায় বিরাট আকারে চিটিং করতে দেখেছি। এ জন্য তিনি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচারও দাবি করেন।
ট্রাম্পের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কর্মকর্তারা পেনসিলভেনিয়ার তিনটি কাউন্টিতে আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে ভোটার নিবন্ধন আবেদন এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কাজ করছেন।তারা ভোটারদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আধা-সত্য ও বিভ্রান্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
বিভ্রান্তিকর তথ্যের স্রোত
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ম্যাসেজ বোর্ড এবং চ্যাট গ্রুপে নির্বাচনি জালিয়াতির শত শত অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে। এই পোস্টগুলোর মধ্যে কয়েকটি লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে৷
পোস্টগুলো এই ইঙ্গিতই দেয় যে, অ-নাগরিকদের পক্ষে ভোট দেওয়া সহজ। ভোটিং মেশিন সম্পর্কে পোস্টগুলোতে মিথ্যা দাবি করা হয়েছে এবং ব্যালট গণনা প্রক্রিয়ায় অবিশ্বাস ছড়ানো হয়েছে। জর্জিয়ায় সম্প্রতি আগত হাইতিয়ানদের ভোট দিতে দেখা যাওয়ার দাবি করা হয়েছে একটি ভিডিওতে।
বিবিসি মিথ্যা ঠিকানা এবং স্টক ফটোসহ স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছে যে, ভিডিওটি ভুয়া। শুক্রবার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি রাশিয়ানদের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এমন আরও কিছু ভুয়া পোস্টও আছে।
২০২০ সালের প্রতিধ্বনি
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, নির্বাচনের আগে এমন মিথ্যা, ভ্রান্ত তথ্যের প্রচারের ফলে নির্বাচনি ফলাফল নিয়ে মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া নির্বাচনের দিন এবং এর পরও পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে চলে যেতে পারে। যেমনটি আগেও ঘটেছিল।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে ভোট গণনার সময় ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগ করেন। নিজেকে প্রকৃত বিজয়ী দাবি করেন। তখন তার সমর্থকরা ‘স্টপ দ্য স্টিল’ স্লোগান দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন এবং ফলাফল পাল্টানোর চেষ্টা করেন; যার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল দাঙ্গা।
এই ধরনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণকারী দলগুলো বলছে, এই বছর নির্বাচনের দিন আসার আগেই ভূয়া ও মিথ্যা খবরের প্রচার শুরু হয়েছে। ‘গ্লোবাল প্রজেক্ট অ্যাগেইনস্ট হেইট অ্যান্ড এক্সট্রিমিজম’ এর প্রতিষ্ঠাতা ওয়েন্ডি ভিয়া বলেছেন, কিছু কট্টর-ডানপন্থি এবং ডানপন্থি কর্মীরা বরং এবার নিজেদের প্রস্তুত করছেন নির্বাচন চুরি হওয়ার জন্য।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্পের দল বহু রাজ্যে নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগে ডজনেরও বেশি মামলা দায়ের করেছিল, কিন্তু কোনটিই সফল হয়নি।
বিচ্ছিন্ন জালিয়াতির ঘটনাগুলো অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ভোট জালিয়াতি ও প্রশাসনিক ত্রুটি ঘটে থাকে। ৫০ টি রাজ্যজুড়ে ভোট গ্রহণ ও ভোটার পরিচালনায় এটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃত ঘটনাগুলো এখন অতি রঞ্জিত করে অনলাইনে শেয়ার করা হচ্ছে।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নর্দমায় ডজন খানেক ব্যালট পাওয়া গেছে। কারণ অজানা হলেও ঘটনাটিকে অনলাইনে ইচ্ছাকৃত জালিয়াতির ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পেছনের দলগুলো
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নির্বাচনি জালিয়াতির দাবিগুলোকে একটি দলীয় নেটওয়ার্ক সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত টেক্সাস-ভিত্তিক ‘ট্রু দ্য ভোটে’র মতো দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে। তাদের তৈরি একটি অ্যাপ ‘ভোটএলার্টে’ সমর্থকরা কথিত নির্বাচনি অনিয়মের উদাহরণ পোস্ট করেন।
মন্তব্যের জন্য ট্রু দ্য ভোটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ক্যাথরিন এনগেলব্রেখ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলো ব্যাপকভাবে নির্বাচনি জালিয়াতি করার পরিকল্পনা করছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তারা সম্ভবত তা পারবে না,কারণ আমাদের আক্ষরিক অর্থে সর্বত্র চোখ আছে।
খারাপ তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই থাকবে
নির্বাচনি কর্মকর্তারা নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালিত করতে খুব কঠোর পরিশ্রম করছেন। তারপরও কিছু খারাপ তথ্য ছড়াতেই থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন ডেমোক্র্যাসি ওয়ার্কসের লুইস লোজাদা। ভুল তথ্যের ঢেউ নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও চলতে থাকবে। ফলে
সব ভোট গণনা করতে এবং বিজয়ী নির্ধারণ করতে কয়েক দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.