11/24/2024 ভোটে ট্রাম্প হেরে গেলে, গৃহযুদ্ধ ও রক্তপাতের শঙ্কা অনেক আমেরিকানদের
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৯ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫৮
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের উদ্বেগের বিষয় হলো– ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে কী ঘটতে পারে। তবে অনেক আমেরিকানের দুশ্চিন্তা ঠিক এর বিপরীত বিষয়ে। তারা ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা ভাবছেন, ট্রাম্প পরাজিত হলে কী হতে পারে?
রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের জন্য দৌড়ে ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে উপনীত হয়েছেন। তবে ট্রাম্প কখনোই নির্বাচনী পরাজয় মেনে নেননি। ২০১৬ সালের আইওয়ার প্রাইমারি থেকে ২০২০-এ প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্যন্ত প্রতিবার একই ঘটনা ঘটেছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতির ফলে গতবার দেশটিতে গভীর মেরূকরণ দেখা যায়। আমেরিকান গণতন্ত্রের প্রতি অবিশ্বাসের বীজ বপনে তাঁর অব্যাহত চেষ্টার ফলেই ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটলে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। এবারও অনেকে সেই সহিংসতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন।
নিউইয়র্ক রাজ্যের বিংহামটন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নিম্যান বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) যদি এ বছর হেরে যান, আমার কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি দাবি করবেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। ফল উল্টে দিতে কোনো কসরত বাকি রাখবেন না তিনি। এমনকি কমলার অভিষেক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে অস্বীকার করবেন তিনি।’
নিম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প শুধু একজন পরাজয় বরণকারীই নন, তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি কখনোই পরাজয় স্বীকার করবেন না।’
ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, নির্বাচনে প্রতারণার চেষ্টা করা তাঁর জন্য অসম্ভব কিছু নয়। একজন পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তিনি গোপনে অর্থ দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ৩৪টি অপরাধমূলক ধারায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, যৌন তারকার সঙ্গে সম্পর্কের মুখরোচক গল্প তাঁর ২০১৬ সালের নির্বাচনী সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে চলেছে।
২০২০ সালের নির্বাচনেও জালিয়াতি ও প্রতারণা করার অভিযোগে তাঁকে দু’বার অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে তিনি দু’বার অভিশংসিত হয়েছেন। চার বছর আগে আমেরিকার জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ট্রাম্প এবং তাঁর মিত্ররা অনিয়ম এবং জালিয়াতির মিথ্যা দাবিতে মাঠ সরগরম করেছিলেন।
গত নির্বাচনে হেরে ট্রাম্প তাঁর বিক্ষুব্ধ সমর্থকদের ওয়াশিংটনে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। এর পর ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্যাপিটলে ভয়াবহ দাঙ্গা বাধান তারা। এবারও সেই রকম সহিংসতার পুনরাবৃত্তি করছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকরা। ট্রাম্প এরই মধ্যে সে ধরনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প গত মাসে মিশিগানে এক সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যদি হেরে যাই... এটার সম্ভবত কারণ তারা জালিয়াতি করবে। এটাই একমাত্র কারণ যে, আমরা হারতে যাচ্ছি ... কারণ তারা প্রতারণা করবে।’
ট্রাম্প ভোট গণনার বৈধতা, বিদেশিদের ভোটদান, মেইল-ইন ব্যালটের নির্ভরযোগ্যতা এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে একই ভিত্তিহীন উদ্বেগকে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সহযোগীরা ২০২১ সালের দাঙ্গার জন্য আইনি লড়াই চালিয়েছেন। ৬০টিরও বেশি মামলা করেছিল তারা। তবে তারা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় হেরেছেন। বিচারক রায় দিয়েছিলেন, প্রথম ভোট পড়ার অনেক আগেই নির্বাচনী সংস্থার বিরুদ্ধে তাদের আপত্তি দায়ের করা উচিত ছিল। সে কথা মাথায় রেখে রিপাবলিকানরা এবার আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন। ভোটদান শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে ১০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছে তারা।
এর মধ্যে অনেক মামলায় ভোটে প্রবেশাধিকার সীমিত করার আবেদন করেছেন তারা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের এ প্রচেষ্টার লক্ষ্য ভোট গণনার ওপর অবিশ্বাস তৈরি করা। ট্রাম্প এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী অন্যরা এ কাজে বছরের পর বছর ব্যয় করেছেন।
উটাহ-ভিত্তিক পিআর ফার্ম ক্রোনাস কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাড্রিয়েন উথে বলেছেন, এবার আইনি সংঘাত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষোভ এমনকি বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হতে পারে।
প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ঘটতে পারে। গত বৃহস্পতিবার স্ক্রিপস নিউজ/ইপসোস প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, ৫ নভেম্বর ভোট শুরু হওয়ার পরে সহিংসতা দমন করতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করাকে সমর্থন করেন বেশির ভাগ আমেরিকান নাগরিক।
এক-চতুর্থাংশেরও বেশি আমেরিকান বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের পর গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। ইউগভের নতুন জরিপ অনুসারে, ১২ শতাংশ বলেছেন তারা এমন কাউকে চেনেন যিনি অস্ত্র তুলে নিতে পারেন যদি তারা মনে করেন, ট্রাম্প প্রতারিত হয়েছেন।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও রক্তপাতের সম্ভাব্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের অফিস এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ‘বিদেশি মদদে হিংসাত্মক প্রতিবাদ, সহিংসতা বা শারীরিক হুমকি এবং রাজ্য এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের ফলাফল প্রত্যয়ন এবং ইলেক্টোরাল কলেজ প্রক্রিয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বিক্ষুব্ধরা।
সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অবশ্য বিশ্লেষকরা এবার রাজধানীতে ২০২১ সালের বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দেখেছেন না। কারণ ওই সহিসংতার ঘটনায় শত শত মামলা এবার শক্তিশালী প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনের সময় এবং পরে রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে সহিংসতার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নিম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় ভয় হলো ম্যাডিসন, উইসকনসিন, ল্যান্সিং, মিশিগান, হ্যারিসবার্গ বা পেনসিলভানিয়ায় সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকরা ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে পারে।’
৫ নভেম্বর ভোটের জন্য আনুষ্ঠানিক দিন ধার্য থাকলেও সোমবার পর্যন্ত ৪ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান ভোট দিয়েছেন। তাদের অনেকে ভোটকেন্দ্রে সশরীরে গিয়ে এবং বাকি মেইলে ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। আগাম ভোটদাতাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট আর ৩৬ শতাংশ রিপাবলিকান বলে জানিয়েছে এলপাইস নামের একটি গণমাধ্যম।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.