11/23/2024 স্টার্টআপ বিকাশে উদীয়মান বাজারে পরিণত হচ্ছে সৌদি আরব
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৪
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলে স্টার্টআপ বিকাশে উদীয়মান বাজারে পরিণত হচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ও ব্যবসায়িক পরিবেশে ব্যাপক সংস্কার আসায় বিনিয়োগ আগের তুলনায় সহজ ও বৈচিত্র্যমুখী হয়ে উঠেছে। এর সুফল পাচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তারা।
সাম্প্রতিক বছরে দেশটিতে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের (এমঅ্যান্ডএ) পাশাপাশি ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে এক্সিট মার্কেটে অংশগ্রহণ বা বড় পরিসরে বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে স্টার্টআপগুলো। খবর ন্যাশনাল নিউজ।
জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে আসার নেতৃত্ব দিয়ে এমইএনএ অঞ্চলের এক্সিট মার্কেটে বরাবরই শীর্ষে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটির দখলে রয়েছে অঞ্চলটির এক্সিট মার্কেটের ৬০ শতাংশ হিস্যা। এর পরই অবস্থান সৌদি আরবের। এ বাজারে যাত্রার মাত্র পাঁচ বছরে সৌদি আরব যৌথ মূলধনি (ভিসি) খাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
বিষয়টি নিয়ে ডাটা প্লাটফর্ম ম্যাগনিটের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ বাহোশি জানান, এ বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) এক্সিট মার্কেটে সৌদি আরবের হিস্যা বেড়ে ২০ শতাংশ হয়েছে, ২০২১ সালে যা ছিল ১২ শতাংশ। গত বছর দেশটি মোট নয়টি লেনদেন প্রত্যক্ষ করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার এমঅ্যান্ডএ লেনদেনের ২১ শতাংশ এবং এ খাতে ইউএইর পরই ছিল সৌদি আরবের অবস্থান।
স্টার্টআপগুলো সাধারণত এক্সিট মার্কেটের উপযোগী হতে গড়ে সাত বছর সময় নেয়। ফিলিপ বাহোশির মতে, দেশটিতে ভিসির ইতিহাস সীমিত বলে এখনো খাতটির পুরোপুরি বিকশিত রূপ দেখার বাকি আছে। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে অনেক কোম্পানি অঞ্চলটির বাকি অংশের তুলনায় এক্সিট মার্কেটে পিছিয়ে আছে। আমরা অপেক্ষা করছি এবং আশা করছি যে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এসব কোম্পানি বিকাশ অব্যাহত রাখবে।’
সৌদি আরবের এক্সিট মার্কেটে এরই মধ্যে উল্লেখ করার মতো বড় কিছু লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ই-কর্মাস সংস্থা টবিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান টুয়েকের অপ্রকাশিত বিনিয়োগ এবং জুনে তাদাউল এক্সচেঞ্জে আইপিও থেকে রিয়াদভিত্তিক ফিনটেক স্টার্টআপ রাসানের ২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ। অনলাইন ফুড ডেলিভারি স্টার্টআপ জাহেজ ২০২২ সালে দেশটির সেকেন্ডারি মার্কেট নোমুয় তালিকাভুক্ত হয়েছিল। ওই সময় কোম্পানিটির বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছিল ২৪০ কোটি ডলার।
এক্সিট মার্কেটে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ সাধারণ প্রবণতা বলে উল্লেখ করেন নুওয়া ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা অংশীদার খালেদ তালহুনি। তিনি আশা করেন, মাধ্যম হিসেবে আইপিও এ বাজারে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের এক্সিট মার্কেটের মূল রুট হলো আইপিও। তাদাউল ও কিছু পরিমাণে নোমু আঞ্চলিক প্রযুক্তির কোম্পানির জন্য আইপিও একটি কার্যকর পথ। এ এক্সচেঞ্জগুলোয় তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক কার্যকলাপ বাড়ায় এটি সম্ভব হয়েছে।’
খালেদ তালহুনি আরো বলেন, ‘রাসান ও জাহেজের সাম্প্রতিক পাবলিক অফার এ বিষয়কে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে। আমি অবাক হবো না, যদি সৌদি আরবের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেশ কয়েকটি নতুন পাবলিক অফার প্রক্রিয়াধীন থাকে।’
সৌদি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এ বছর মিডিয়া আউটলেট আশরক নিউজকে জানিয়েছে, ১৩টির বেশি সৌদি স্টার্টআপ আগামী দুই বছরে পাবলিক অফারিংয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আরব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি সৌদি আরব গত বছর স্টার্টআপ খাতে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি অর্থায়নকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটির স্টার্টআপগুলো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ১৩০ কোটি ডলার সংগ্রহ করে ওই সময়। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ভিসি বিনিয়োগের শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের প্রথমার্ধে সৌদি স্টার্টআপগুলো ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি মূলধন সংগ্রহ করেছে, যা এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ।
সৌদি আরবের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যমূলক এজেন্ডা ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে স্টার্টআপগুলো এসটিভির মতো স্থানীয় তহবিল পাচ্ছে। এতে রয়েছে ৮০ কোটি ডলার মূলধনসহ একটি প্রযুক্তি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল। এছাড়া দেশটির সার্বভৌম সম্পদ তহবিল পিআইএফের পোর্টফোলিও কোম্পানি সানাবিল থেকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা আসছে।
গত বছর সৌদি আরব ও সমগ্র অঞ্চলে প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য ১৫ কোটি ডলার তহবিল ঘোষণা করেছিল এসটিভি। ভিসি প্রকল্প সমর্থন করে এমন বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য বছরে ২০০ কোটি ডলার মূলধন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সানাবিল।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থা ফ্লাটসিক্সল্যাবসের মহাব্যবস্থাপক আইয়াদ আলবায়ুকের মতে, সৌদি আরবের এ ধরনের উদ্যোগ বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। এখানে বৃহৎ বাজার ও পর্যাপ্ত পুঁজি রয়েছে, যা মিলিতভাবে স্টার্টআপ বিকাশকে ত্বরান্বিত করছে। তারল্য ছাড়াও সৌদি আরব বিনিয়োগসংক্রান্ত নীতি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক বাস্তসংস্থান বিকাশে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন তিনি।
আইয়াদ আলবায়ুক জানান, পাঁচ বছর আগে আইপিওর মাধ্যমে এক্সিট ছিল স্বপ্নের মতো। বড় করপোরেশন ছাড়া কেউ বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারত না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে গেছে। ছোট ও মাঝারি মানের ব্যবসাগুলো সমান্তরাল বাজারের পাশাপাশি বড় কোম্পানির সঙ্গে প্রধান বাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.