11/22/2024 মিয়ানমারে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে মুসলিমরা
মুনা নিউজ ডেস্ক
২০ অক্টোবর ২০২৪ ২২:০০
২০২১ সালে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর পর থেকেই দেশটির বিভিন্ন অংশে জান্তা সরকারের বিরোধিতা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে জাতিভিত্তিক সশস্ত্র কিছু দল ও উপদল।
মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি নজিরবিহীন জোটও তৈরি হয়েছে। এই জোটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ওই অঞ্চলটিতে ‘মুসলিম কোম্পানি’ নামে পরিচিত একটি মুসলিম যোদ্ধা দল খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নে (কেএনইউ) যোগ দিয়েছে।
এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে কেএনইউ এখন গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়নক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে যোগ দেওয়া মুসলিম কোম্পানি নামের দলটিতে অন্তত ১৩০ জন মুসলিম যোদ্ধা রয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা এমন একটি বৃহত্তর আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতি ও বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দেয়।
মুসলিম কোম্পানির নেতা মোহাম্মদ আইশার। তিনি মনে করেন জান্তা সরকারের দমন-পীড়ন দেশের সব সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করেছে। তাই এই বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধের জন্য সবার মধ্যে ঐক্য জরুরি। কেএনইউতে মুসলিম কোম্পানির যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করেন আইশার। বিষয়টি বর্তমান বিদ্রোহের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে বলে জানান তিনি। সামরিক কর্তৃত্ববাদী শাসনকে ভেঙে দেওয়াই এটির লক্ষ্য।
বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা মুসলিম তরুণদের আকৃষ্ট করছে মুসলিম কোম্পানি। এই দলটির মধ্যে নারীরাও সক্রিয়। থান্ডার নামে মুসলিম কোম্পানির ২৮ বছর বয়সী এক নারী সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছিল আল জাজিরা। থান্ডার জানিয়েছেন, ২০২১ সালের অক্টোবরে একজন যুদ্ধকালীন চিকিৎসক হিসেবে মুসলিম কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
ঐতিহাসিকভাবে মিয়ানমারে মুসলিমদের অতীত খুবই যন্ত্রণাময়। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘুরা প্রায় সময় প্রান্তিকতা এ বৈষম্যের শিকার হয়েছে। মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রায় সময়ই দেশটির বৌদ্ধ সংস্কৃতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। এর ফলে দেশটিতে মুসলিম সম্প্রদায়গুলো প্রায় সময়ই জাতিগত নিধনের শিকার হয়েছে। দেশটির রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও বিতাড়িত করার ঘটনার এসবেরই ধারাবাহিকতা। এর মধ্যে জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে মুসলিম কোম্পানির যোগদান মিয়ানমারের বিভক্ত গোষ্ঠীগুলোর সংহতির একটি আশাব্যঞ্জক চিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
মিয়ানমারের মুসলিম সম্প্রদায় বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা এবং ভারতীয়, চীনা ও আরব বংশোদ্ভূতরা। দেশটির তানিনথারি অঞ্চলেও মুসলিমদের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। এই অঞ্চলের মুসলিমেরা প্রায়ই কারেন ও মোনের মতো অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে। এই অঞ্চল থেকে উঠে আসা মুসলিম কোম্পানির সৈন্যরা তাঁদের পোশাকে ‘অল বার্মা মুসলিম লিবারেশন আর্মি’ (এবিএমএলএ) ছাড়াও বর্তমানে কেএনইউয়ের প্রতিনিধিত্বকারী একটি ব্যাজ বহন করেন। এই বিষয়টি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিমদের প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.