11/22/2024 পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়া মোড়ের ইঙ্গিত, শাহবাজ-ইউনূস বৈঠকের সম্ভাবনা
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১০
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে এ দুই দেশের সম্পর্ক স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ লক্ষ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে নিউইয়র্কে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে কিছুদিনের মধ্যেই।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কয়েকটি সূত্র রোববার এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে কয়েক মাসের ব্যাপক বিক্ষোভের পর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়টি অবশ্যই ইসলামাবাদের জন্য ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সংশোধনের ‘দরজা’ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার আমলে কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করাটা ছিল পাকিস্তানি কূটনীতিকদের জন্য কঠিন কাজ। তবে গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানি কূটনীতিক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে এরই মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। যোগাযোগের ধারাবাহিকতা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার আশা দেখাচ্ছে।
ট্রিবিউন এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে এমন একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। দুই দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া আছে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ ফোরামও আছে।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কমিশন কার্যত অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০০৭ সালে। তবে পাকিস্তান এখন যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ গত ১০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা সহজ করার দাবি জানান। পাকিস্তানও দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে হাইকমিশনার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া যেমন—পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের পরামর্শ এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমটি বলেছে—একইভাবে, সম্পর্ক সংশোধনের চলমান প্রচেষ্টায় বাড়তি গতি আনতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ চলতি মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।
বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এ বৈঠক দুই দেশের মধ্যকার প্রথম উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক। কারণ, শেখ হাসিনা কার্যত তাঁর শাসনামলে এ ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছিলেন। পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, একটি চেক করা ইতিহাস সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই মুহূর্তে পাকিস্তান সম্পর্কে একটি অসাধারণ সদিচ্ছা রয়েছে।
সেই ইতিবাচক অনুভূতির দৃষ্টান্ত দেখা যায় যখন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ভারতীয় নীলনকশার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শহীদুজ্জামান পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব করেন। তিনি পাকিস্তানকে ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর এই বক্তব্য সামনে উপস্থিত দর্শক ব্যাপক করতালির মাধ্যমে গ্রহণ করেন। আর এটি বাংলাদেশে-পাকিস্তান ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। সরকারকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে পাকিস্তান সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও ১৯৭১ সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনো বাংলাদেশিদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও গভীর সহযোগিতার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের দুর্বিষহ স্মৃতি কাটিয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.