11/22/2024 ছেলের মৃত্যু নিয়ে ট্রাম্পকে রাজনীতি বন্ধ করতে বললেন এক বাবা
মুনা নিউজ ডেস্ক
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫০
ট্রাম্প শিবিরের প্রচারণায় সম্প্রতি উঠে এসেছে ২০২৩ সালের একটি সড়ক দুর্ঘটনার কথা। দুর্ঘটনাটি ঘটে ওহাইওর ছোট শহর স্প্রিংফিল্ডে। এক হাইতিয়ান অভিবাসী চালকের গাড়ির সঙ্গে স্কুল বাসের সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন এইডেন ক্লার্ক নামের ১১ বছর বয়সি এক কিশোর।
সেই ঘটনা সম্প্রতি জাতীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে। ধারণা করা হচ্ছে, শহরটির হাইতিয়ান অভিবাসীদের সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে তারা বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসছে।
মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এইডেনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভান্স লেখেন, শিশুটিকে হত্যা করেছিল একজন হাইতিয়ান অভিবাসী।
তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সন্তানের মৃত্যুকে রাজনৈতিক লাভের জন্য ব্যবহার না করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নিহত কিশোর এইডেন ক্লার্কের বাবা নাথান ক্লার্ক।
তিনি জেডি ভান্সের ওই পোস্টের পর সেদিনই সিটি কমিশনের এক সভায় অভিযোগ করে বলেন, কথাটা পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তুলেছে। তারা রাজনৈতিক লাভের জন্য আমার ছেলের নাম নিচ্ছে এবং তার মৃত্যুকে ব্যবহার করছে। এটা এখনই বন্ধ হওয়া দরকার।
নাথান ক্লার্ক আরও বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়নি। হাইতি থেকে আসা ওই অভিবাসীর দ্বারা সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এই ট্র্যাজেডির ঘটনা স্থানীয়, রাজ্য এমনকি জাতীয় পর্যায়েও মানুষকে ছুঁয়ে গেছে। কিন্তু, এর মোড় ঘৃণার দিকে ঘুরিয়ে দেবেন না।
হাইতির অভিবাসীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের পোষা প্রাণী ধরে খেয়ে ফেলছে এমন ভিত্তিহীন দাবিও ছড়িয়েছেন ট্রাম্প এবং ভান্স।
ক্লার্কের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মাথায়, ট্রাম্প আবারো এইডেন ক্লার্কের মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত দাবিটি তুলে ধরেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের সাথে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের মঞ্চেই এটি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
নাথান বলেন, আমার ছেলে যদি একজন ষাট বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ মানুষের কারণে মারা যেত তাহলে বোধহয় ভালো হতো। এ সময় পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তার স্ত্রী ড্যানিয়েল।
ক্লার্কে ভাষ্য, এমন স্থূলবুদ্ধির কথা কেউ বলতে পারে, এটা হয়তো আপনাদের কল্পনারও অতীত। কিন্তু, যদি তেমন কারো হাতে আমার ১১ বছরের ছেলেটা মারা পড়তো, অনবরত ঘৃণা ছড়ানো এই লোকগুলোর হাত থেকে হয়তো আমরা রেহাই পেতাম।
যে ভ্যানের সঙ্গে স্কুলবাসের সংঘর্ষে এইডেন মারা যায় সেটি চালাচ্ছিলেন হারমানিয়ো জোসেফ নামে একজন হাইতিয়ান অভিবাসী। জোসেফের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। রাস্তার আরেক পাশে গিয়ে স্কুল বাসকে ধাক্কা দেয় তার ভ্যান। বাস উল্টে গেলে ছেলেটি বাইরে ছিটকে পড়ে যায়। আরো কয়েকটি শিশুও আহত হয়েছিল।
অনিচ্ছাকৃত হত্যা এবং যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় জোসেফকে। নয় থেকে সাড়ে তের বছরের সাজা দেয়া হয় তাকে।
মঙ্গলবার ট্রাম্পের প্রচারণায় ব্যবহৃত এক্স অ্যাকাউন্টে এইডেন এবং জোসেফের ছবি পাশাপাশি পোস্ট করা হয়। প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের আগে আগে করা পোস্টটিতে আক্রমণ করা হয় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের অভিবাসন নীতিকেও।
ক্যাপশনে লেখা হয়, মনে রাখতে হবে, ১১ বছর বয়সী এইডেন ক্লার্ক স্কুলে যাওয়ার পথে এক হাইতিয়ান অভিবাসীর হাতে নিহত হয়েছিল, যেই অভিবাসীদের কমালা হ্যারিসই এই দেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। এরপরের দিন ভান্সের ওই পোস্টটি আসে।
নিহত ওই কিশোরের বাবা বলছেন, তারা যত খুশি ঘৃণা উগরে দিতে পারে। অবৈধ অভিবাসন, সীমান্ত সংকট নিয়ে যা খুশি বলতে পারে। এমনকি পোষা প্রাণীর ওপর নৃশংসতা এবং কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ সেগুলো খেয়ে ফেলার মতো অসত্য দাবিও তুলতে পারে। কিন্তু যত যাই হোক, ওহাইও'র স্প্রিংফিল্ডের এইডেন ক্লার্কের নাম নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি তাদের। তার পরিবারের সদস্যরা এখন তাদের জীবনের জঘন্য দিনগুলো পার করছে।
তবে এই বিষয়ে বিবিসি'র পক্ষ থেকে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে সাড়া দেয়নি ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক বক্তব্যে তারা আশা প্রকাশ করেছে যে, গণমাধ্যম ওহাইও'র ঘটনাটির মতো মানুষের সেই সত্যিকারের দুর্দশাগুলো তুলে ধরবে, যা এতোদিন যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.