11/21/2024 বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধে বাংলাদেশকে আদানি গ্রুপের কঠোর বার্তা
মুনা নিউজ ডেস্ক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৭
বকেয়া অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিক্রির পাওনা বেড়ে চলার প্রেক্ষাপটে ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ঝাড়খন্ডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের গড্ডা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ আদানির কাছে বাংলাদেশের বকেয়া ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার হয়েছে। এ পরিস্থিতিকে আদানি গোষ্ঠী ‘টেকসই নয়’ বলে বর্ণনা করেছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমটিকে আদানি গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানি যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। (দেশটির) নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং বকেয়া পরিশোধ সংক্রান্ত আলোচনার পাশাপাশি সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা নিয়েও আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে।’
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার বলেছে যে আর্থিক চাপ সত্ত্বেও তারা বাংলাদেশে বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কোম্পানিটি বলেছে, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের জানিয়েছি যে পরিস্থিতি আর টেকসই পর্যায়ে নেই। কারণ, আমরা একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি বজায় রাখছি, অন্যদিকে তেমনই আমাদের ঋণদাতা ও সরবরাহকারীদের কাছে দেওয়া অঙ্গীকারও রয়েছে।’
বাংলাদেশের সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম একটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের কাজ শুরু করেছিল আদানি গোষ্ঠী, ২০২২ সারের ডিসেম্বরে তা শেষ হয়। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের শতভাগ বাংলাদেশে রফতানি করা হবে।
অর্থ পরিশোধের এই দায় বাংলাদেশের সার্বিক জ্বালানিসংকটেরই একটি অংশ। বাংলাদেশের বিদ্যুৎসংক্রান্ত দায়ের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলারে উঠেছে। জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আদানি বাংলাদেশের কাছে ৮০ কোটি ডলার পায়, তার মধ্যে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ বিলম্বিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বতী সরকার এখন বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতার কাছে অর্থসাহায্য চাইছে। এর উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতি স্থিতিশীল করা।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু একই সময়ে জ্বালানি-স্বল্পতায়ও ভুগছে। মূলত গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সমালোচকেরা বলছেন, সাবেক সরকারের নেওয়া খোলা দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ কেনার মতো পদক্ষেপ দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও অদক্ষতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।
আদানি অবশ্য বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে। তবে ড. ইউনূসের প্রশাসন এমন ইঙ্গিত দিয়েছে যে আগের করা জ্বালানি চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এর উদ্দেশ্য হলো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র পুনঃরায় চালু করা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বাংলাদেশ থেকে না সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদানির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে আমাদের গড্ডা কেন্দ্র ভারতীয় বিদ্যুৎব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তাই অন্য কোথাও এই বিদুৎ সরবরাহ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ সাশ্রয়ের জন্য একদিকে যেমন বিভিন্ন চুক্তির শর্ত নিয়ে পুনরায় আলোচনা করতে চায়, তেমনই ভারত ও চীনের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতেও আগ্রহী। সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে ভবিষ্যতে অবকাঠামো খাতে যত চুক্তি হবে, তাতে অর্থ সাশ্রয় ও স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.