11/22/2024 হাসিনা সরকারের গোপন ঋণ: শেষ সময়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা অর্থ ছাপিয়ে নেয়
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৮ আগস্ট ২০২৪ ০৩:৩৮
সরকারকে সরাসরি ঋণ না দেবে না বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তথ্য গোপন করে ৪১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো নতুন ঋণ নেয়নি। উল্টো ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করেছে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের আমলে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি থেকে 'ওভার ড্রাফট' কৌশল খাটিয়ে সীমার বাইরে ৪০ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০২৩ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দিয়েছিল বাজারে টাকার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সরাসরি কোনো ঋণ দেওয়া হবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, 'গত দুটি মুদ্রনীতি ঘোষণার আগে একাধিকবার অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগকৃত গভর্নর আস্বস্ত করেছেন, তারা আর টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেবেন না। যদিও বাস্তব চিত্র পুরোপুরি উল্টো।'
'কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতিকে বেগবান করেছে,' বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন এক সময়ে তথ্য গোপন করে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেয়, যখন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, সর্বশেষ এ বছরের জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১১.৬৬ শতাংশে। এ মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১৪.১০ শতাংশ।
সরকার সাধারণত ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়। বিল ও বন্ডের নিলামে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সম্পূর্ণ ঋণ না পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারকে দেওয়া ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই দেয় ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে আর ঋণ দেওয়া হবে না।
তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দেখানো হয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ দেখানো হয় ৯৭ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে ঋণ না বেড়ে উল্টো ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মতো উপকরণ ইস্যু ছাড়াও সরকার জরুরি প্রয়োজনে 'ওভারড্রাফট' সুবিধার মাধ্যমে ঋণ নিতে পারে।
গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ওভারড্রাফট সীমা নির্ধারিত ছিল ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারির আগপর্যন্ত এ সীমা ৬ হাজার কোটি টাকা ছিল। তবে সম্প্রতি ওভারড্রাফট সীমা বাড়িয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
সীমার বাইরে সরকারের জরুরি টাকার দরকার হলে নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে তা নিতে পারবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে 'ওভার ড্রাফট' খাতের সীমা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করতে পারে। তবে এ ঋণ ৯০ দিনের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
কিন্তু সাবেক গভর্নরের আমলে এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে সরকারকে ওভার ড্রাফট খাতে ঋণ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ গত জুনে ওভারড্রাফট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সাবেক গভর্নরের মৌখিক নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয় বলে জানিয়েছে সূত্র।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থায়ন করা মানেই টাকা ছাপানো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তো বলেই দিয়েছিল, ২০২৩ সালের জুনের পরে টাকা ছাপানোর পথে নেই। তাহলে তো মিথ্যা বলেছে। সরকারকে এত টাকা ঋণ দিলে তা আগুনে ঘি ঢালার মতো মূল্যস্ফীতিতে ইন্ধন জুগিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আরেকটি বিষয় হলো—নির্ধারিত সীমা না মেনে ঋণ দিয়ে একটি অনিয়ম করা হয়েছে। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি করা যেতে পারে। ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যারা ছিলেন, তারা যদি গভর্নরের মৌখিক নির্দেশে দিয়ে থাকেন, তাহলে তারা ওই কমিটিকে বলবেন। টাকার গতিপথ বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়। ব্রিফকেসে করে কেউ নিয়ে যায়নি। কোথায় কীভাবে খরচ হয়েছে, খতিয়ে দেখা উচিত।'
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.