03/15/2025 জিল্যান্ডিয়া : পৃথিবীর বুকে লুকানো মহাদেশ
মুনা নিউজ ডেস্ক
২ জুন ২০২৩ ১০:৪৭
পৃথিবীর মহাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে যে ৭টি নাম মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা খুব পরিচিত। কিন্তু যদি বলি একটি লুকোনো মহাদেশকে মিস করে গেছেন!
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা এমন এক বিস্তৃত এলাকার সন্ধান পেয়েছেন, যেটি পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। নিউজিল্যান্ড এই মহাদেশের পানির ওপর থাকা একমাত্র অংশ। বাকি সবটুকু পানির নিচে। এ কারণে বিজ্ঞানীরা মহাদেশটির নাম দিয়েছেন জিল্যান্ডিয়া। এর আয়তন ৫০ লাখ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি। আকারে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সমান। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অস্ট্রেলিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান।
জিল্যান্ডিয়া একটি নিমজ্জিত মহাদেশীয় ভূখণ্ড। দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এর অবস্থান। ১৯৬০ সালে তেলের খনি অনুসন্ধানের সময় ‘জিল্যান্ডিয়া’র মহাদেশীয় অস্তিত্ব বিষয়ে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হয় বিজ্ঞানীরা। নিউজিল্যান্ড রাষ্ট্র এই মহাদেশের একমাত্র দৃশ্যমান পর্বত চূড়া। বর্তমানে সাতটি মহাদেশের বাইরে জিল্যান্ডিয়াকে অষ্টম মহাদেশ হিসেবে ঘোষণার জোরালো দাবি জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। স্বীকৃতি পেলে জিল্যান্ডিয়া হবে পৃথিবীর অষ্টম এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মহাদেশ।
জিল্যান্ডিয়ার আয়তন ৪.৯ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। আকারে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সমান এবং ইউরোপের অর্ধেক। পানির ওপরে আছে মহাদেশটির মাত্র ৬ শতাংশ। খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যপূর্ণ জিল্যান্ডিয়া—নিউজিল্যান্ড মহাদেশ বা তাসমান্টিস নামেও পরিচিত।
জিল্যান্ডিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডের শুধুমাত্র নিউজিল্যান্ডের নর্থ ও সাউথ আইল্যান্ড এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া-ই পানির ওপরে মাথা তুলে আছে। জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধনে বিজ্ঞানীরা বলেন, জিল্যান্ডিয়ার আয়তন পার্শ্ববর্তী অস্ট্রেলিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান।
বহুবছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ডুবে আছে এই মহাদেশ। এর বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ডে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত ও পাললিক শিলা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানান, মহাদেশটি আকস্মিকভাবে খুঁজে পাওয়া গেছে তা নয়, বরং ধীরে ধীরে এর অস্তিত্ব দেখা গেছে। ২০ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টার্কটিকা ও ভারত ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় তলিয়ে গিয়েছিল জিল্যান্ডিয়া। জিল্যান্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ১৩ কোটি বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয় অ্যান্টার্কটিকা থেকে। ৬ থেকে ৮.৫ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া বিচ্ছিন্ন হয় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকেও। এরপর ক্রমশ এটি পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। ধারণা করা হয়, ২.৩ কোটি বছর আগে সম্পূর্ণ মহাদেশটিই নিমজ্জিত ছিল।
জিল্যান্ডিয়া পানির নিচে ডুবে থাকা এক মহাদেশ—এই ধারণা সাম্প্রতিককালের নয়। হার্স্টহাউজ, যিনি বিজ্ঞানী নন, তার সময়ে ভৌগোলিক জরিপও হয়নি, ১৮৫৭ সালে নিউজিল্যান্ডের এক প্রথম দিককার ঔপনিবেশিক, তার বই ‘New Zealand or Zealandia, the Britain of the South’-এ লিখেছিলেন, “নিউজিল্যান্ডের ভূপ্রকৃতি এই তত্ত্বকে নির্দেশ করে যে এটি মূলত অনেক বড় কোনো মহাদেশের একটি অংশ, যেটি দীর্ঘসময় আগে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।”
২০০২ সালে ব্যাথিমেট্রিক মানচিত্র প্রণয়নের মাধ্যমে জানা যায়, জিল্যান্ডিয়া একটি বিশাল অঞ্চলজুড়ে ব্যাপ্ত, সমন্বিত ভূখণ্ডও বটে। মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ভূখণ্ডের বিভিন্ন ধরনের শিলার উপস্থিতি, গভীরতা, টিলাসহ যেসব বৈশিষ্টের দরকার তার সবকটিই পূরণ করেছে এই মহাদেশীয় ভূখণ্ড—দাবি বিজ্ঞানীদের।
সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.