11/22/2024 ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দুশ্চিন্তা এখন জম্মু নিয়ে
মুনা নিউজ ডেস্ক
১ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৫২
ভারতের কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি মোকাবিলার চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখন বেশি চিন্তায় পড়েছে জম্মু নিয়ে। ইদানীং পরপর ঘটে যাওয়া কিছু সন্ত্রাসবাদী হামলার পর গোয়েন্দারা মনে করছেন, জঙ্গিরা হয়তো কৌশল বদলে জম্মুর দিকে নিরাপত্তা বাহিনীকে বেশি ব্যস্ত রাখতে চাইছেন, যাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুবিধামতো সময়ে উপত্যকায় বড়সড় আক্রমণ করতে পারে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এসব হামলার লক্ষ্য একটাই, নির্বাচন বানচাল করা।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, যেগুলোর একটি বিতর্কিত।
বিতর্কিত ব্যবস্থাটি নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকে জম্মু-কাশ্মীরে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবাদ ধীরে ধীরে তীব্রতা পাওয়ায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামে গ্রামে নাগরিক সশস্ত্র সুরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সরকারের যুক্তি ছিল, গ্রামীণ এলাকায় নাগরিকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে জঙ্গিদের তারা প্রাথমিকভাবে রুখে দেওয়ার কাজটুকু করতে পারবে। সেই পুরোনো সিদ্ধান্ত আগেই নতুনভাবে প্রয়োগ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।
এবার ঠিক হয়েছে, সাধারণ আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি গ্রাম সুরক্ষা বাহিনীর হাতে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রও তুলে দেওয়া হবে। সে জন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল আগেও, এবারও উঠেছে।
নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত পদাধিকারীদের একাংশের মতে, অতীতে এই ব্যবস্থা তেমন একটা কাজে আসেনি। গ্রামবাসীর প্রতিরোধ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বরং বহু ক্ষেত্রে জঙ্গিরা গ্রামবাসীর আগ্নেয়াস্ত্র লুট করেছে। এবার স্বয়ংক্রিয় বা আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দেওয়া হলে তা জঙ্গিদেরই উৎসাহিত করবে। সরকারের লাভের লাভ কিছু হবে না। এই মহলের মতে, বহু এলাকায় গ্রাম থেকে জঙ্গিরা নানা সাহায্য পায়। কিছু মানুষ জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীলও।
বিতর্ক সত্ত্বেও সরকারি সিদ্ধান্তের নড়চড় হয়নি। সেই সঙ্গে ঠিক হয়েছে, জম্মুর জঙ্গল এলাকায় মোট ৭৫টি শিবির খোলা হবে, যেখানে রাখা হবে সেনাবাহিনীর স্পেশাল অপারেশন্স গ্রুপে (এসওজি) জওয়ানদের। এই বাহিনী পাহাড়ি জঙ্গল এলাকায় জঙ্গি দমনে প্রশিক্ষিত। জম্মু থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় যত টানেল বা সুড়ঙ্গ রয়েছে, সেসব এলাকায়ও পাহারা দেবে বিএসএফ। এর অর্থ বিএসএফকে সীমান্তের পাশাপাশি টানেল সুরক্ষার দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক আর আর সোয়াইন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকার সম্ভাব্য অনুপ্রবেশপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব এলাকায় পাহারা বাড়ানো হয়েছে। হামলাকারীরা ৫-৬ জনের বেশি কখনো থাকে না। তারা জম্মু জেলার উঁচু এলাকাগুলো বেছে ঘাঁটি গাড়ছে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করছে। এই প্রবণতা রুখতে উঁচু এলাকায়ও বিএসএফ মোতায়েন করা হচ্ছে।
সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই গোয়েন্দারা জানিয়ে আসছেন, ফি বছর ২০০ থেকে ২৫০ জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে নাশকতা চালায়। বছর শেষে নিরাপত্তারক্ষীদের বয়ানে মারা যায় ১৫০ থেকে ২০০ জঙ্গি। পরের বছর বরফ গলার আগে থেকেই শোনা যায়, দুই-আড়াই শ জঙ্গি সীমান্ত পেরোনোর অপেক্ষা করছে। এই হিসাব এত বছর পরও অপরিবর্তিত।
সোয়াইন এবারও বলেছেন, জম্মুর কাঠুয়া, ডোডা, উধমপুর বা রিয়াসি এলাকায় ৫০-৬০ জঙ্গি ঘাঁটি গেড়েছে। এরা প্রধানত জইশ-এ-মোহাম্মদ গোষ্ঠীভুক্ত। এদের মধ্যে কয়েকজন সেনা অভিযানে মারা গেছে। বাকিরা লুকিয়ে আছে। যদিও শীত পড়ে গেলে হয় তাদের পাকিস্তানে ফিরে যেতে হবে, নয়তো কাশ্মীর উপত্যকায় চলে যেতে হবে। উপত্যকায় গেলে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাড়তি ২ হাজার সেনা জওয়ান জম্মু-কাশ্মীরে মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে আরও বাহিনী পাঠানো হতে পারে।
পাকিস্তানের সঙ্গে জম্মুর সীমান্ত ৪৮৫ কিলোমিটার। অধিকাংশ এলাকা ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে ঢাকা।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.