11/23/2024 আন্দোলন দমনে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার হয়েছে : অ্যামনেস্টি
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৬ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৫
মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে সৃষ্ট বিক্ষোভ দমন করতে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে তারা।
এছাড়া নাগরিকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অধিকারকে সম্মান করতে, আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়ন বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর সকল ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনার বিশ্লেষণ করে ২৫ জুলাই, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব কথা জানায় মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘বাংলাদেশ থেকে পাওয়া সীমিত তথ্য দেশটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন ভিডিও এবং ফটোগ্রাফিক প্রমাণ যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রাণঘাতী এবং কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের তিনটি ঘটনার ভিডিও যাচাই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং এর ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর ডিপ্রোজ মুচেনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে সামনে আসা ভিডিও এবং ফটোগ্রাফিক প্রমাণের বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রমাগত যাচাই ও বিশ্লেষণ ভয়াবহ চিত্র সামনে তুলে ধরছে।’
অতীতে বাংলাদেশ সরকার এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মানবাধিকার বিষয়ক ভয়াবহ রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে র্যাবও মোতায়েন করা হয়েছে। এ অবস্থায় ইন্টারনেট ও সক্রিয় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অভাবে এবং যোগাযোগ বিধিনিষেধের কারণে আন্দোলনকারীদের অধিকার সুরক্ষিত হওয়ার নিশ্চয়তা খুবই কম।’
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে দেশের বাইরে আসা সীমিত তথ্য মানবাধিকার পর্যবেক্ষণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিপ্রোজ মুচেনা আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং তার সংস্থাগুলোকে মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকারকে সম্মান করতে, এই সহিংস দমন-পীড়ন বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে সমস্ত যোগাযোগ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আহ্বান জানাচ্ছে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাভার, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং রামপুরার ডিআইটি রোডে বিক্ষোভের ভিডিও যাচাই করেছে বলে জানিয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সমাবেশে পুলিশিং বা দায়িত্ব পালনের সময় আগ্নেয়াস্ত্র কোনও উপযুক্ত হাতিয়ার হতে পারে না; মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের বিষয়ে আসন্ন হুমকির মোকাবিলা করার জন্য কঠোরভাবে প্রয়োজন হলেই কেবল এসব অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত।’
ডিপ্রোজ মুচেনা বলেছেন, ‘কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে, সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি সচল করতে হবে এবং বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, কারফিউ, বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি চালানোর আদেশ এবং ইন্টারনেট বন্ধের মতো পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হবে না। এই দমনমূলক ব্যবস্থাগুলো এই বিক্ষোভ এবং ভবিষ্যতের যে কোনও ভিন্নমতকে চূর্ণ করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই সিনিয়র ডিরেক্টর বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্ত ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে জবাবদিহি করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে সংস্থাটি বলছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলন গত ১৬ জুলাই মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং এরপর থেকে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন, কয়েক হাজার আহত হয়েছেন ও কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.