11/13/2024 ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিশ্ব নেতাদের উদ্বেগ ও নিন্দা
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৪ জুলাই ২০২৪ ০৬:১৮
নির্বাচনী জনসভায় প্রাণঘাতী হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন রিপাবলিকান নেতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভরা সভায় তাকে লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি চালায় এক বন্দুকবাজ। ট্রাম্পের কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। তবে খতম হয়েছে হামলাকারীও।
এই ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে বিশ্ব নেতারা। রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা।
জানা গিয়েছে, ১৩ জুলাই শনিবার পেনসিলভ্যানিয়ার বাটলারে নির্বাচনী জনসভা করছিলেন ট্রাম্প। বক্তৃতা চলাকালীন হঠাৎই তাকে দেখা যায় কানে হাত দিতে। তার পরই বিপদ বুঝে তিনি নিচু হয়ে যান। শোনা যায় গুলির শব্দ। দেখা যায় ট্রাম্পের কান দিয়ে রক্ত ঝরছে। সভাস্থলে ছড়িয়ে যায় আতঙ্ক। দ্রুত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে তাকে ছেড়েও দেয়া হয়।
এ ঘটনায় মারা গিয়েছেন সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি, যাকে মূল অভিযুক্তর সঙ্গী বলেই মনে করা হচ্ছে। আহত দুজন। ট্রাম্পের উপর হামলার কথা শোনার পরই কর্মসূচি পরিবর্তন করে দ্রুত হোয়াইট হাউসে ফিরে যান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আমেরিকায় এই ধরনের হামলার ঘটনার কোনও স্থান নেই। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে উনি সুস্থ রয়েছেন। আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে এই ঘটনার নিন্দা জানাতে হবে।’
ট্রাম্পের জনসভায় হওয়া হামলার নিন্দা করেছেন বারাক ওবামাও। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রে রাজনৈতিক হিংসার কোনও জায়গা নেই। ট্রাম্প নিরাপদে আছেন শুনে স্বস্তি পেলাম।’
এ ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া শোনা গিয়েছে পররাষ্ট্রসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের গলাতেও। নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর হামলার কথা শুনে আমি স্তম্ভিত। আমেরিকায় রাজনৈতিক হিংসার কোনও জায়গা নেই।’
কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, এক্সের কর্ণধার এলন মাস্ক-সহ আরও অনেকে।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের আরোগ্য কামনা করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, ‘প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর এই হামলার ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। রাজনৈতিক হিংসা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।’ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বন্ধুর উপরে হামলার ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
নিন্দা জানিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘ট্রাম্পের উপর হওয়া হামলার কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। আমি ওনার আরোগ্য কামনা করি।’ এছাড়াও ট্রাম্পের জনসভায় হামলার ঘটনার নিন্দা করেছে তাইওয়ান।
এ ঘটনায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন, “ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। প্রচার সমাবেশের সময় তার ওপর যে হামলা হয়েছে তাতে আমি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।
এছাড়াও ঘটনার সময় নিহত দর্শকের কথা উল্লেখ করে তিনি ‘হত্যার শিকার নিরাপরাধ ওই ব্যক্তি’র পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনও স্থান নেই।”
যুক্তরাজ্যের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “আমরা সব ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই এবং এই সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার পরিবারকে আমাদের শুভেচ্ছা।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, “আমার চিন্তাভাবনা হত্যাচেষ্টার শিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে রয়েছে। আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। ওই ঘটনায় একজন দর্শকের মৃত্যু হয়েছে, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এটা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য একটি ট্র্যাজেডি। ফ্রান্স আমেরিকান জনগণের এই ধাক্কা এবং শোক ভাগ করে নিচ্ছে।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ট্রাম্পকে হত্যাপ্রচেষ্টার ঘটনায় ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ নিন্দা জানিয়েছেন।
তার মুখপাত্র স্টিফান ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “মহাসচিব দ্ব্যর্থহীনভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি দ্রুত ট্রাম্পের আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন।”
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে এমন যেকোনও ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।”
রতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “বন্ধু প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। রাজনীতি ও গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনও স্থান নেই। তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, আহতদের এবং আমেরিকান জনগণের সাথে রয়েছে।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে ট্রাম্পকে সংহতি এবং... দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন।
সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, আশা করছি- নির্বাচনী প্রচারের পরবর্তী কয়েক মাস ঘৃণা ও সহিংসতার উপর সংলাপ এবং দায়িত্বের প্রাধান্য পাবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ বলেছেন, “এটি অস্ট্রেলীয় এবং আমেরিকানদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি অমার্জনীয় আক্রমণ। এই মূল্যবোধগুলোই আমাদের দুই দেশকে একত্রিত করে।”
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেছেন, “আমার চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে রয়েছে এবং আমি তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। গণতন্ত্রে কোনও ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর পেনসিলভেনিয়া সমাবেশে গুলি চালানোর বিষয়ে জানতে পেরে আমি হতবাক। এই ধরনের সহিংসতার কোনও যৌক্তিকতা নেই এবং পৃথিবীর কোথাও কোনও স্থান নেই। সহিংসতা কখনওই প্রাধান্য পাবে না। আমি এটা জেনে স্বস্তি পেয়েছি যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নিরাপদ। এবং তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, “এইমাত্র জানতে পেরেছি- সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাচনী সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এটি একটি জঘন্য ঘটনা। রাজনীতিতে সব সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।”
ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বলেছেন, “সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার পর এখন তিনি ভাল আছেন, এই খবর পেয়ে অত্যন্ত স্বস্তি পেলাম। আমাদের চিন্তা ও প্রার্থনা তার এবং তার পরিবারের সাথে রয়েছে। বিশ্বের সকল গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের সাথে আমরা সকল প্রকার রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানাই। জনগণের কণ্ঠ সর্বদা সর্বোত্তম থাকতে হবে।”
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন বলেছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেনসিলভানিয়া সমাবেশের ঘটনায় আমি হতবাক। আমার ভাবনা সাবেক প্রেসিডেন্ট, তার পরিবার এবং এই হামলার শিকারদের সাথে রয়েছে। কোনও দেশেই এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কাম্য নয়।”
সূত্র: সিএনএন, আল জাজিরা
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.