11/23/2024 অবশেষে কোটার হার পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
মুনা নিউজ ডেস্ক
১১ জুলাই ২০২৪ ০৯:৫৩
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ হাইকোর্টের সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দেশটির বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ করেন।
সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, এই রায় বাংলাদেশ সরকারের ওপর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। প্রয়োজনে কোটার অনুপাত পরিবর্তন, হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে সরকার। আর কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সরকার সাধারণ মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করতে পারবে। সেই সঙ্গে কোটার বিষয়ে রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি গত ৯ জুন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ৪ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। ওই দিন রিটকারীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় সময় চাওয়া হয়। তখন প্রধান বিচারপতি ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন।
গতকাল বুধবার দুটি আবেদন একসঙ্গে শুনানি করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করা হয়। একই সঙ্গে এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনায় আপিল বিভাগ বলেছেন, আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলে আদালত আশা করেন। আর আন্দোলনকারীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবেন। আদালত মূল আবেদন নিষ্পত্তির সময় তাঁদের সে বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগ সাবজেক্ট মেটারে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন। সাবজেক্ট মেটারে (বিষয় বস্তু) কোটা নেই, সেটিই চলবে। হাইকোর্টের রায়ের আগে যে অবস্থা ছিল সেটাই হলো। রায় পেলে আবেদন (লিভ টু আপিল) করব। তখন আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় দেবেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলব আর আন্দোলন করার যৌক্তিক কারণ নেই। আপনারা সবাই রাস্তা ছাড়েন। আর জন দুর্ভোগ করবেন না।
দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, কোটার বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির মাধ্যমে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করা হয়েছিল। রিট করলে হাইকোর্ট বাতিল করাটা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের আদেশের ফলে ২০১৮ সাল থেকে যেভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে আসছিল, সেভাবে চলবে। যারা হাইকোর্টে পক্ষে রায় পেয়েছেন তাদেরও চূড়ান্ত ফয়সালা আপিল বিভাগ থেকেই নিতে হবে।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্রে বলা হয়—৯ম (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ৯ম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। তাতে হাইকোর্ট ওই পরিপত্র বাতিল করে রায় দেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলার লিভ টু আপিলের শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। আমরা তা গুরুত্ব সহকারে শুনব। আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সব সময় খোলা রয়েছে।’
দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, নির্বাহী বিভাগের যে কোনো আদেশ চ্যালেঞ্জ করার জন্য বিচার বিভাগের কাছে আসে। আদালত আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনিতো বারের নেতা, রাজনৈতিক কর্মী। পেশাজীবীদের নেতা হিসেবে আপনারও দায়িত্ব আছে যারা আন্দোলন করছে তাদের বোঝানোর জন্য। এটা আল্টিমেটলি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.