11/25/2024 মোঘল রাজদরবারের কবি মির্জা গালিব
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৪ জুন ২০২৪ ০৯:০০
মির্জা গালিব ছিলেন উর্দু ভাষার সবচেয়ে প্রভাবশালী কবি। জন্ম ১৭৯৭ সালে মোঘল সম্রাজ্যের আগ্রায়। মির্জা আসাদুল্লাহ খাঁ গালিব তার পুরো নাম। মোঘল রাজ দরবারের কবি হিসেবে প্রসিদ্ধি পাওয়া মির্জা গালিব মাত্র ২৩৪ টি গজল-কবিতা লিখেছিলেন। আর তাতেই তিনি হয়ে ওঠেন উর্দু কবিতার প্রাণপুরুষ। শুধু উপমহাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে তার প্রতিভা ছড়িয়েছে ঘ্রাণ। গালিবের কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে অনেকে বলে থাকেন, কাব্য যদি ‘ধর্ম’ হয় তাহলে গালিবকে না বোঝা মানে ‘কাফের’ হওয়া।
কারো কারো মতে, বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের যে গুরুত্ব, উর্দু সাহিত্যে মির্জা গালিবের তেমনিই গুরুত্ব। মোঘলদের ক্ষমতা শেষের সময়টুকু ছিল উর্দু কাব্যের শ্রেষ্ঠ যুগ। কারণ, এই সময় গালিব লিখছিলেন তার প্রিয় পঙতিগুলো। ৭২ বছর বয়সে অনেক আর্থিক কষ্টের মধ্যদিয়েই মারা যান এই কবি। মৃত্যুর পর তার জনপ্রিয়তা আরো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।
মির্জা গালিবের বিখ্যাত একটি কবিতা:
শরাব পিনে দে মসজিদ ম্যা ব্যায়ঠ কার,
ইয়া ও জাগা বাতা যাঁহা খুদা নেহি’
মসজিদে মদ পান করতে দাও আমাকে,
অথবা এমন জায়গার কথা বলো আল্লাহ নেই যেখানে।
আয়ে ওয়াএ গাফলত নিগাহে শওক ওরনা য়াঁ
হার পারাহে সাঙগে সাখতে দিল কোহে তুর থা
হে অমনোযোগী অন্তরচোখ দেখো খুলে,
পাহাড়ের প্রতিটি পরতে আল্লাহর দেখা মেলে।
অর্থাৎ, হজরত মুসা সৃষ্টিদর্শনে অমনোযোগী ছিলেন, তাই তিনি স্রষ্টা দর্শনে তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন। তিনি যদি চোখ মেলে তাকাতেন পাহাড়ের প্রতিটি পাথরে আল্লাহকে দেখতে পেতেন।
বর্তমান সময়ে আমরা যেসকল প্রসিদ্ধ গজল শুনি, বেশিরভাগই গালিবের লেখা। জগজিৎ সিং, মেহেদি হাসান, মো. রফি, গোলাম আলী, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর, আবিদা পারভিন, ফরিদা খাতুন, টিনা খান, বেগম আকতার, রাহাত ফাতেহ্ আলী খান প্রমুখ সবারই কণ্ঠে গালিবের গজল-ই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছে।
গালিবের পূর্বে ত্রয়োদশ শতাব্দীর খ্যাতিমান উর্দু কবি আমির খসরু, পঞ্চদশ শতাব্দীর উর্দু খ্যাতিমান কবি মিরা বাই, ১৬ শতাব্দীর মো: কুলি কুতুব শাহ এবং তার সময়কার মো: ইব্রাহিম খান, খাজা হায়দার আলী, ইমাম বক্স প্রমুখ এবং তার পরের কবিরা কেউ আজও পর্যন্ত এই যশস্বী শক্তিধর কবির মতো পৃথিবীব্যাপী ঈর্ষণীয় খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি!
গালিব ছিলেন একজন কোমল হৃদয়ের অতি দয়ালু প্রকৃতির মানুষ, তার প্রমাণ, তার রচনা ‘দাশাম্ব দিনলিপিতে মোঘলদের পতন কাহিনী ও সিপাহী বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে (১৮৫৭) অতি করুণ ও মর্মান্তিক ভাষায় বিদগ্ধ শ্লোকে ফুটে উঠেছে।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি অতিকষ্টে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। কারণ, ১৮৫৭-এর সিপাহি বিদ্রোহ তার জীবনকেও তছনছ করে দিয়েছিল। গালিব তার জীবদ্দশায় জীবনের জন্য কখনো জীবিকা অর্জন করেননি, ফল হিসেবে মৃত্যুর আগে তাই তাকে উপোস থেকেও দিনাতিপাত করতে হয়েছিল।
তিনি তার নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকতে তার গুণকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্মরণ করবে। সত্যিই পরের ইতিহাস তার কথার সত্যতা প্রমাণ করেছিল।
১৮৬৯ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ৭১ বছর বয়সে এই অমর কবি ভারতবর্ষে দিল্লির বালিমারান, চাঁদনি চকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.