11/23/2024 ২৫ জেলায় ছড়িয়ে পড়ল রাসেল ভাইপার
মুনা নিউজডেস্ক
২০ জুন ২০২৪ ১৫:২৩
এক সময়ের বিলুপ্ত বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার ক্রমেই যেন রাজত্ব গেড়ে বসতে শুরু করেছে দেশব্যাপী। বরেন্দ্র এলাকা ছেড়ে সাপটির খোঁজ মিলছে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকার আশপাশেও। অস্তিত্ব মিলেছে ২৫ জেলায়। চলতি বছর এ সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন।
রাসেল ভাইপার দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। ছোট ও সরু লেজের সরীসৃপটি দৈর্ঘ্যে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। শরীরজুড়ে অনেকটা চাঁদের মতো গাঢ় বাদামি গোল গোল দাগ। দৈহিক এই বৈশিষ্ট্যের কারণে শুকনো পাতা বা ধান ক্ষেতের মধ্যে খুব সহজেই লুকিয়ে রাখতে পারে নিজেকে। রাসেল ভাইপার সাপ চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত।
সাধারণত সাপ মানুষকে এড়িয়ে চললেও ঠিক উল্টো স্বভাব রাসেল ভাইপারের। নিজেকে বিপন্ন মনে করলেই করে বসে আক্রমণ। আক্রমণের ক্ষেত্রে এটি এত ক্ষিপ্র যে, ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে শেষ করতে পারে পুরো প্রক্রিয়া। ক্ষেপে গেলে শব্দ করে প্রচণ্ড জোরে। ঠিক যেন প্রেসার কুকারের মতো।
রাসেল ভাইপারের বিষ হেমাটোটক্সিক, যার কারণে ছোবল দিলে আক্রান্ত স্থানে পঁচন ধরে। ছোবলের পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফুলে যায় ক্ষতস্থান। এর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে ফুসফুস, কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
আরও পড়ুন: ঘরের মিটসেফের নিচে বিষধর সাপ, ছোবলে গৃহবধূর মৃত্যু
বেশির ভাগ সাপ ডিম পাড়লেও রাসেল ভাইপার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণ শেষে স্ত্রী রাসেল ভাইপার সাধারণত ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও আছে। একদিকে উচ্চ প্রজনন ক্ষমতা, অন্যদিকে বেজি, গুইসাপসহ প্রকৃতি থেকে সাপের শত্রু বিলীন হয়ে যাওয়া সেইসঙ্গে ইঁদুর, ব্যাঙসহ সাপের পর্যাপ্ত খাবারের উপস্থিতি থাকায় বাড়ছে রাসেল ভাইপার।
বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাঈদ সময় সংবাদকে বলেন,
দেশের সব অঞ্চলে শিয়াল, গুইসাপ ও বেজি দেখলেই লোকজন মেরে ফেলছেন। তারা জানেন না, এটির উপকারিতা কত! এ কারণেই রাসেল ভাইপারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ তার খাদক নেই। ইকো সিস্টেমে ব্রেক হয়ে গেছে।
দেশে একটা সময় বিলুপ্ত বলা হলেও দেশজুড়ে এখন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে রাসেল ভাইপার। বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও সাপটির রাজত্ব এখন দেশের অন্তত ২৫টি জেলায়। পৌছে গেছে চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী পর্যন্ত। সব চেয়ে বেশি আনাগোন মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার অববাহিকায়, যার ছোবলে চলতি বছর এরই মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন, যাদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে।
আরও পড়ুন: ভেদরগঞ্জে সাপের উপদ্রব, রাসেল ভাইপার পিটিয়ে হত্যা
পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া মাঠে কাজ করা এবং সাপে কাটার পর গ্রামীণ জনপদ এখনও ঝাড়ফুঁকের মতো কুসংস্কার থেকে মুক্ত না হওয়ার মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকারও অভিযোগ আছে।
মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘সাপ দংশন করলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত। ওঝার বাড়িতে গিয়ে অনেকে সময় নষ্ট করেন। এতে বিষক্রিয়া পুরোপুরি প্রকাশ পেয়ে গেলে আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া রোগীকে বাঁচানো যাবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, অ্যান্টিভেনম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত দেয়া আছে। যেসব এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি, সেসব জায়গায় সংরক্ষিত আছে। এনসিডির (নন কমিউনিকেবল ডিজিজ) সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেটি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
দেশে বছরে চার লাখেরও বেশি মানুষকে সাপে কাটে, যাদের মধ্যে সাত হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.