11/26/2024 আয়েশা বাউনিয়া (রহ.) : সুফিধারার প্রথম সফল নারী লেখক
মুনা নিউজ ডেস্ক
২১ মে ২০২৪ ০২:৫৭
আয়েশা বিনতে ইউসুফ বাউনিয়া (রহ.) হিজরি অষ্টম শতাব্দীর বিখ্যাত আলেমা ও সুফিবাদী কবি। তিনি ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ধর্মীয় জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার জন্য সুপরিচিত ছিল। তাঁর পিতা, চাচা, ভাই ও সন্তান সবাই ছিলেন নিজ নিজ সময়ের শীর্ষ আলেম।
ফিকহ (ইসলামী আইন), হাদিস, তাসাউফ (আধ্যাত্মিকতা), ইতিহাস, সাহিত্য ইত্যাদি শাস্ত্রে তাদের বিশেষ দক্ষতা ছিল। তাঁর পিতা ইউসুফ শামের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। ফলে পারিবারিক পরিমণ্ডলে তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। বয়স আট বছর হওয়ার আগেই তিনি কোরআন হিফজ করেন।
অতঃপর তিনি শামের বিখ্যাত আলেমদের কাছ থেকে ধর্মীয়, ভাষাগত ও সাহিত্যের জ্ঞানার্জন করেন। সেখান থেকে তিনি মিসরে যান এবং বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেন। এমনকি আয়েশা বাউনিয়া (রহ.) ফাতাওয়া প্রদান ও হাদিসের পাঠদানের অনুমতি লাভ করেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করার পর তিনি লেখালেখিতেই মনস্থির করেন এবং এ ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ফলে বহুসংখ্যক মানুষ তার জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হওয়ার সুযোগ পায়। জ্ঞানগত দক্ষতা ও আধ্যাত্মিক উত্কর্ষের কারণে সমকালীন আলেম, কবি-সাহিত্যিক ও পদস্থ কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। ধর্মীয় জ্ঞান ও সাহিত্যে আয়েশা বাউনিয়া (রহ.)-এর খ্যাতি ছিল প্রবাদতুল্য। ফিকহ, হাদিস ও তাসাউফ শাস্ত্রে তিনি যেমন নির্ভরযোগ্য ছিলেন, তেমনি ছিলেন গদ্য ও পদ্যে অদ্বিতীয়। অন্যদিকে উত্তম চরিত্র ও আল্লাহভীতিতেও ছিলেন শ্রেষ্ঠ উপমা।
তাঁর সময়ের বেশির ভাগ ঐতিহাসিক তাঁর মেধা-প্রতিভার সাক্ষ্য দিয়েছে এবং পরবর্তী যুগের সাহিত্যের পাঠকরা তার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়েছে। আয়েশা বাউনিয়া (রহ.)-এর বেশির ভাগ গদ্য ও পদ্যের বিষয়বস্তু ছিল ইসলাম। তিনি তাসাউফের নানাদিক, আল্লাহ ও তাঁর নবীর প্রশংসায় কবিতা ও গদ্য রচনা করেছেন। তবে সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সহচরদের নিয়েও তাঁর রচনা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্তুতিকাব্যে তিনি পূর্বসূরি কবিদের পথ অনুসরণ করেছেন। তাদের ভাব ও বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে তাঁর কবিতায়। বিশেষত তাঁর ওপর কাসিদাতুল বুরদার রচয়িতা মুহাম্মদ বিন সাঈদ আল-বুসিরির প্রভাব অত্যন্ত দৃশ্যমান। যদিও তাঁর নবীপ্রেম, নিষ্ঠা ও সততা প্রশ্নাতীত। সুফিবাদী কবিতায় তিনি ইবনুল ফারিজের পদাঙ্ক অনুসরণীয় ছিলেন। গজল, কাশফ, ইলহাম, আল্লাহপ্রেম, আল্লাহর অস্তিত্বের অনুভূতি ইত্যাদি বিশ্লেষণ তিনি ইবনুল ফারিজের দর্শনের আলোকেই করেছেন। সাহিত্য সমালোচকদের দৃষ্টিতে উপমা ও অলংকরণ, ছন্দ ও তাল, সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার ও ভাব ব্যক্ত করার ঐতিহ্যগত পদ্ধতির বিচারে তাঁর কবিতাগুলো কালোত্তীর্ণ; বরং বিস্ময়কর। কবিতার আকাশে তাঁর উড্ডয়ন ছিল এমন সপ্রতিভ, যেন তিনি সমকালীন কবিদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
আয়েশা বাউনিয়া (রহ.) দুটি ‘বাদিয়াহ’ (আরবি কবিতার বিশেষ ধরন) রচনা করেন। তা হলো ‘বাদিউল বাদি ফি মাদহিশ শাফি’ এবং ‘আল-ফাতহুল মুবিন ফি মাদহিল আমিন’। ইতিহাস ও জীবনী গ্রন্থগুলোতে আয়েশা বাউনিয়া (রহ.)-এর ২৫টির অধিক বইয়ের নাম পাওয়া যায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা হলো ‘আল ফাতহুল হক্কি ফি মানহিল তালাক্কি’, ‘আল মালামিহুশ শারিফাতু ওয়াল আসারুল মুনিফাতু’, ‘মানাজিলুস সায়িরিন’, ‘আল কাওলুল বাদিউ ফিস সালাতি আলাল হাবিবিশ শাফিয়ি’ ইত্যাদি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলোর ভেতর ‘আল-ফাতহুল মুবিন ফি মাদহিল আমিন’ এবং গদ্যের ভেতর ‘ফাইজুল ফাজাল ওয়া জামউশ শামাল’কে শ্রেষ্ঠ রচনা মনে করা হয়।
আধ্যাত্মিকতার পথে আয়েশা বাউনিয়া (রহ.)-এর মুরশিদ (পির) ছিলেন শায়খ জামালুদ্দিন ইসমাইল হাওয়ারি (রহ.) ও তাঁর খলিফা শায়খ মুহিউদ্দিন ইয়াহইয়া আউরামারি (রহ.)। তাঁরা উভয়ে ছিলেন উচ্চ মর্যাদাশীল বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব। ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে (সম্ভাব্য) তিনি হজ করেন। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় তিনি মিসরের কায়রো নগরীতে অতিবাহিত করেন।
আয়েশা বাউনিয়া (রহ.) আহমদ বিন মুহাম্মদ (রহ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যার বংশধারা হুসাইন (রা.)-এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী ছিলেন। তারা হলো আহমদ ও আবদুল ওয়াহাব এবং আয়েশা ও বারাকাহ। আয়েশা বাউনিয়া (রহ.) ২১ ডিসেম্বর ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। স্বামী আহমদ (রহ.) তাঁর আগেই (১৫০৩ খ্রি.) ইন্তেকাল করেন।
তথ্যসূত্র : আরব ইনসাই ডটকম, আদব ডটকম, মারেফা ডটকম ও উইকিপিডিয়া
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.