11/27/2024 আরবি সাহিত্যের নন্দিত কবি আল মুতানাব্বি
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:২৫
হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর বিশ্ববরেণ্য ও নন্দিত আরবি কবি আবু তৈয়ব আহমদ মুতানাব্বি। তার রচিত ‘দিওয়ান’-এর খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী ছিলেন কবি মুতানাব্বি। সমকালীন আরববিশ্বে তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে গণ্য করা হতো। তার কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য চিন্তার সূক্ষ্মতা, ভাবের গভীরতা, সুরের দ্যোতনা, শব্দ প্রয়োগের যথার্থতা, উপমার সামঞ্জস্য।
তার পুরো নাম আবু আত তাইয়িব আহমাদ ইবনুল হুসাইন আল মুতানাব্বি আল কিন্দি। তিনি ইরাকের কুফায় ৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন আরব কবি। আরবি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিতি লাভ করেন।
মুতানাব্বির অধিকাংশ কাব্য তার জীবৎকালে সাক্ষাৎ পাওয়া রাজাদের প্রশংসা করে লেখা হয়েছে। কারো কারো মতে, ৩২৬টি কবিতা তার জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রচিত হয়েছে। নয় বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও রসবোধের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন সর্বমহলে। তার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সাহস, জীবনদর্শন ও যুদ্ধের বর্ণনা।
আল মুতানাব্বির অনেক কবিতা তৎকালীন সময়ে ও বর্তমান আরব বিশ্বে বিস্তৃত হয়েছে। তার কবিতাকে প্রবাদতুল্য গণ্য করা হয়।
তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো: ‘সিংহের দাঁত দেখা গেলে তাকে হাসি ভাবতে যেয়ো না।’
আল মুতানাব্বি তার মেধার কারণে সে সময়ের অনেক রাজা-বাদশাহ ও নেতাদের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পান। তিনি সেসব নেতা ও রাজাদের প্রশংসা করে কবিতা লিখেছেন। বিনিময়ে শাসকরাও তাকে অর্থ ও উপহার দিতেন। তার নিজের যুগে তার শক্তিশালী কাব্যিক ধারা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তাকে খ্যাতির সীমাহীন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
কিন্দাহ নামক স্থানে মুতানাব্বির জন্ম। শৈশব কিন্দাহতেই অতিবাহিত হয়। তার বাবা একজন সাধারণ পানি বহনকারী ছিল। মহল্লার ঘরে ঘরে পানি দিত। এ জন্য সে ইদানে ‘সুক্কা’ নামে প্রসিদ্ধ ছিল। শৈশব থেকেই সে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী। অল্প বয়সেই সে সিরিয়ায় চলে যায় এবং জীবনের প্রথম অংশ জ্ঞান ও সাহিত্যের পরিবেশে কাটান।
বুঝ হওয়ার পর আরবি সাহিত্যের বড় বড় প্রসিদ্ধ পণ্ডিতের সান্নিধ্য লাভ করে। তাদের থেকে ‘আরবি সাহিত্য’ শিখেছে। ওই যুগের বড় বড় সাহিত্যিকের মধ্যে যুজাজ, আস্ সিরাজ, আবুল হাসান, আফাশ, আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে দরিদ প্রসিদ্ধ ছিল।
আল মুতানাব্বি শুধু তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎই ছিল না, বরং নিজের অসাধারণ যোগ্যতা ও মেধার মাধ্যমে তাদের প্রভাবিতও করেছিল। একবার আল মুতানাব্বি ‘কুলব’ গোত্রের কাছে গিয়ে নিজেকে ‘আলবি’ বলে দাবি করে। এরপর সে নিজেকে ‘নবী’ বলেও দাবি করে। নবী দাবি করা এলাকার আমির আবু লু-লু তাকে জেলে পাঠায়। পরে তওবা করার পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করে আমিরদের প্রশংসা করত। ধন-সম্পদ উপার্জন করার জন্য রাজা-বাদশাহদের প্রশংসা করাই ছিল তার কাজ। আরবের এ মহাকবির মৃত্যু হয় ২৩ সেপ্টেম্বর ৯৬৫ সালে ইরাকের আন নুমানিয়া নামক স্থানে।
তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দিওয়ানে মুতানাব্বি’ থেকে কয়েকটি আরবি কবিতার অনুবাদ:
‘আল কলবু আলামু ইয়া আজুলু বিদাইহি, ওয়া আহাক্কু মিনকা বিজাফনিহি ওয়া বিমাইহি’
অর্থ: (হে অজ্ঞ তিরস্কারকারী!) আমার হৃদয় তার দুঃখ-কষ্ট আর ব্যাধি সম্পর্কে তোমার চেয়ে বেশি জানে,
আর আমার চোখের পলক ও অশ্রুর ব্যাপারে তোমার চেয়ে বেশি অধিকারী।
অর্থাৎ হে উপদেশকারী! তুমি আমার অন্তরকে তিরস্কার করছ, অথচ তুমি আমার অন্তরের রোগের ব্যাপারে সঠিকভাবে কিছু জান না, আমার অন্তর নিজ রোগের অবস্থা সম্পর্কে তোমার চেয়ে ভালো জানে এবং যে নিজ রোগের অবস্থা জানে; সে তার উত্তম চিকিৎসাও করতে পারে।
চোখ থেকে যে অশ্রু ঝরে, তা অন্তরের রোগের কারণেই ঝরে এবং এ অশ্রু ঝরাই প্রেমের জ্বালা হালকা করতে। যেহেতু অন্তর সব অঙ্গের পরিচালক, তাই নিজ চোখের ওপর এবং অশ্রুর ওপর অন্তরের অধিকার সর্বাধিক, অতএব এ অশ্রু অন্তরের মর্জিতেই প্রবাহিত হচ্ছে।
‘ফাওয়ামান আহিব্বু লাআজিয়ান্নাকা ফিল হাওয়া, কসামান বিহি ওয়া বিহুসনিহি ওয়া বাহাইহি’
অর্থ: (হে তিরস্কারকারী) আমার প্রেমিকার কসম, প্রেম ও মহব্বতের ব্যাপারে অবশ্যই আমি তোমার কথা শুনব না,
আমার প্রিয়ার কসম, তার সৌন্দর্যের কসম ও তার রূপের কসম। বরং অবশ্যই আমি তোমার বিরোধিতা করব।
অর্থাৎ এ কবিতায় কবি মহব্বতের ক্ষেত্রে কারো কথা না মানার ব্যাপারে প্রিয়ার ব্যক্তিত্ব, তার সৌন্দর্য ও রূপের কসম খেয়েছে। এই কসমগুলোর মাধ্যমে তার অন্তরের পাকা ইচ্ছারও বহিঃপ্রকাশ হয়ে গেছে, আর যে জিনিসের জন্য তার অন্তর দেওয়ানা সেটাও অত্যন্ত সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রকাশ করে দিয়েছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.