11/22/2024 বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ : বিবিএস
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৬
বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২-এর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে জাতীয় গণনার সঙ্গে শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকাশ করা হয় খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ প্রতিবেদনও।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫। এর মধ্যে কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭। আর ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭, যা মোট শিশুর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
এক দশক আগে ২০১৩ সালে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ বা ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন, যা মোট শিশুর ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক সাদ্দাম হোসেন খান জানান, জরিপে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) বা নমুনা গণনা এলাকা থেকে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা (১২টি নন-রেসপনসিভ খানাসহ) নির্বাচন করা হয় এবং সেই অনুযায়ী ৬৪টি জেলা থেকে স্যাম্পল বেসিস তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছিল। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুসারে, পল্লি এলাকায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ৮ লাখ ১০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। এর মধ্যে শিশুশ্রমে নিয়োজিতের সংখ্যা পল্লি এলাকায় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ৪ লাখ ৪০ হাজার। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিতের সংখ্যা পল্লি এলাকায় ৮ লাখ ২০ হাজার এবং শহরাঞ্চলে ২ লাখ ৪০ হাজার।
জরিপ থেকে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী শিশু শ্রমিকের ৮২ শতাংশ নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে। এর মধ্যে উৎপাদনে ৩৩ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং কৃষি, বনায়ন ও মাছ ধরায় ২৩ দশমিক ৬০ শতাংশ নিযুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশু শ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং স্কুলে যায় ৫২ দশমিক ২০ শতাংশ।
শিশু শ্রমিকদের গড় মাসিক আয় ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। এ ছাড়া ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী রয়েছে, যাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। ৮০ হাজার শিশু শ্রমিক পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত। উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক খাত কৃষি, শিল্প ও পরিষেবা যথাক্রমে ১০ লাখ ৭০ হাজার, ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে।
রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় বক্তব্যে বাংলাদেশে শিশুশ্রম নেই বলে দাবি করেন। কিন্তু বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার এবং শিশু শ্রমিক ১৭ লাখ ৭৬ হাজার। বাংলাদেশে শিশুশ্রম বিদ্যমান তা প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেন কি না—অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন রাখা হয়।
এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দাবি করছি না যে শিশুশ্রম নেই (এলিমিনেটেড)। আমাদের লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা শিশুশ্রম নিরসন করব। এখন আমরা একটা প্রক্রিয়ায় আছি মাত্র। ২০২৫ সালে শিশুশ্রম শূন্যে আনতে পারব বলে আমাদের আশা এবং ধারণা।’
পৃথিবীর গরিব দেশগুলোর সবখানেই শিশুশ্রম আছে উল্লেখ করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-সচিব দিপংকর রায় বলেন, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে ১৬০ মিলিয়ন শিশুশ্রম আছে ইউনিসেফের তথ্যমতে।
বিবিএস বলছে, বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, বিবিএস সরকার ঘোষিত এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ পরিচালনার জন্য পাঁচটি খাত নির্বাচন করেছে। এই খাতগুলোকে কেন্দ্র করে শিশুশ্রম বিরাজমান রয়েছে এবং জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৩ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময়ে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৩৮ হাজার ৮ জন ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু ৫ খাতে ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজে নিয়োজিত শিশু শ্রমজীবীর মধ্যে ৯৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৪০ শতাংশ মেয়ে শিশু।
এই পাঁচ খাতে শ্রমজীবী মোট শিশুর সংখ্যা হলো যথাক্রমে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮ জন, চামড়ার তৈরি পাদুকা তৈরিতে ৫ হাজার ২৮১ জন, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার ম্যাকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ২৪ হাজার ৯২৩ এবং অনানুষ্ঠানিক ও স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন। এ থেকে স্পষ্ট যে, পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের মধ্যে শ্রমজীবী শিশুদের সবচেয়ে বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে অটোমোবাইল খাতে।
এই খাতে কর্মরত শিশুর ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাম এবং ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিবিএসের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ও উন্নয়ন পরিচালক ম্যাট ক্যানেল এবং ঢাকায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমো পোটিয়ানেন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.