11/26/2024 গাজায় প্রায় ১৩৭ ঘণ্টার পারিশ্রমিক দান করলেন ক্যালিফোর্নিয়ার কারাবন্দী
মুনা নিউজ ডেস্ক
৫ মার্চ ২০২৪ ০৬:৪২
ক্যালিফোর্নিয়ার কারাগারে দারোয়ান ও কুলির কাজ করেন এক বন্দী। ঘণ্টায় ১৩ সেন্ট রোজগার তাঁর। সেই আয় থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ত্রাণ তহবিলে ১৭.৭৪ ডলারের পে চেক দান করেছেন সেই কারাবন্দী। অর্থাৎ, ১৩৬.৫০ ঘণ্টা বা ২১ দিনের পারিশ্রমিক গাজায় দান করেছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
৫৬ বছর বয়সী এই কারাবন্দীর নাম হামজা বলে জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাতা জাস্টিন মাশউফ। হামজার সঙ্গে তাঁর চিঠি চালাচালি হয়। গত মাসে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে হামজার কর্মবিবরণীর সঙ্গে ১৭.৭৪ ডলারের পে চেকের ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে লেখা ছিল ‘ক্যালিফোর্নিয়ার সংশোধন ও পুনর্বাসন বিভাগ’।
সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জাস্টিন মাশউফ লিখেছেন, ‘গাজায় ১৭.৭৪ ডলার দান করা এক কারাবন্দী ভাইয়ের সঙ্গে চিঠিবিনিময় করছি। এই দান কারাগারে দারোয়ান হিসেবে কাজ করা তাঁর ১৩৬ ঘণ্টার শ্রমের সমষ্টি। সৃষ্টিকর্তা তাঁর এই আন্তরিক দানকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিক।’
হামজার অনুদান নিয়ে মাশউফের পোস্টটিতে পড়েছে ২৪ হাজারের বেশি লাইক। ৮ হাজার ২০০ বারের বেশি রিটুইট করা হয়েছে পোস্টটি।
সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে ফিলিস্তিনের তৃণমূল সংগঠন প্যালেস্টাইনি ইয়ুথ মুভমেন্ট হামজার গল্প শেয়ার করে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের সঙ্গে গভীরতম সংহতি জানানো সত্তা বন্দী হয়ে আছে কারাগারে। এটা কেবল আজকের ঘটনাই নয়, ঐতিহাসিকভাবেই এমনটি হয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কারা ব্যবস্থা এবং ফিলিস্তিনকে অবরুদ্ধ করে রাখা অভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পের সম্প্রসারণ—যা নিপীড়িতদের অপরাধী বানাতে চায়, তাদের অদৃশ্য করে ফেলতে চায় এবং বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার জন্য তাদের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করে দিতে চায়।’
হামজার আইনি রেকর্ড পর্যালোচনা করে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে হামজাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। দোষী সাব্যস্ত করার সময় কিশোর ছিলেন হামজা।
গোফান্ডমি নামক ক্যাম্পেইন পেইজে হামজার জন্য তহবিল গঠন করেছেন জাস্টিন মাশউফ। সেখানে লিখেছেন, ‘১৯৮০-এর দশকে ভুলবশত নিজের প্রিয় একজন মানুষকে গুলি করেছিলেন হামজা। এতে মৃত্যু হয় গুলিবিদ্ধের। এরপর চার দশকের বেশি সময় ধরে কারাবাসে আছেন হামজা। নিজের ভুলে পরিবারের সদস্যকে হারানোর দুঃখ তিনি অনুভব করছেন গত কয়েক দশকের প্রতিটি দিন। কারাগারে থাকার এই সময়ে তিনি হয়ে উঠেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। কয়েক দশক ধরেই প্যারোলে মুক্তির আবেদন করে আসছেন তিনি।’
ক্যাম্পেইন পেইজে এক বিবৃতিতে মাশউফ বলেছেন, মার্চের শেষ নাগাদ হামজার মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। ক্যাম্পেইন পেজটি খোলার পর থেকে এ পর্যন্ত হামজার জন্য তহবিলে উঠেছে ১ লাখ ডলারের বেশি অর্থ। কারাজীবন শেষ হওয়ার পর হামজার জীবনধারণ, পোশাক, চাকরির সন্ধান এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেল ফোন পরিষেবার জন্যও তোলা হয়েছে এই অর্থ।
তবে হামজা এই তহবিল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গত বুধবার জানিয়েছেন জাস্টিন মাশউফ।
হামজা লিখেছেন, ‘কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া থেকে শুরু করে আমাকে সাহায্য ও সহায়তা করার জন্য এই তহবিলের মাধ্যমে আপনারা যে উদারতা ও দয়া দেখিয়েছেন, তাতে আমি হৃদয় থেকে আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আমি এখন আপনাদের প্রত্যেককে বলতে চাই—ফিলিস্তিন, ইয়েমেন ও আফ্রিকার দুর্দশাগ্রস্ত শিশু এবং মা-বাবারা অমানবিক পরিস্থিতিতে বাস করছে। পানি, আশ্রয়, চিকিৎসা, খাবার ছাড়াই তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় তাদের ওপর বোমা হামলা হচ্ছে। তারা আপনাদের মতোই সাধারণ মানুষ; রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাদের কোনো হিসাব নেই। তারা অমানবিক কষ্টে আছে।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.