11/23/2024 ১০০ রুপিতে ক্যানসারের ওষুধ আনলো টাটা মেমোরিয়াল
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৪
মরণব্যাধি ক্যানসারের নাম শুনলেই মনে আতঙ্ক জাগে। আধুনিক চিকিৎসায় ক্যানসারকে কিছুটা বাগে আনা সম্ভব হলেও, এর চিকিৎসায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মতো জটিলতা রয়েই গেছে। আবার অনেক সময় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবারও এই রোগ শরীরে ফিরে আসে। কিন্তু এবার ক্যানসার চিকিৎসায় বিরাট সুখবর দিলো ভারতের মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাদভে দাবি করেছেন, ১০ বছর ধরে গবেষণা করে তারা সফল হয়েছেন। দ্বিতীয়বার ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে বাঁচানোর জন্য এক যুগান্তকারী ওষুধ তৈরি করে ফেলেছেন তারা বলে দাবি। আবার সেই ট্যাবলেটের দামও খুব কম, মাত্র ১০০ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ওষুধের দাম হতে পারে ১৪০ টাকার আশেপাশে।
ডা. রাজেন্দ্র বাদভের দাবি, সংস্থার গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে ১০ বছর ধরে কাজ করছেন। তারা এমন একটি ট্য়াবলেট তৈরি করেছেন, যা রোগীদের মধ্যে দ্বিতীয়বার ক্যানসারের আক্রমণ প্রতিরোধ করবে। এছাড়া এই ওষুধ বিকিরণ ও কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ৫০ শতাংশ কমিয়েও দেবে।
এক সাক্ষাৎকারে রাজেন্দ্র বলেন, গবেষণার জন্য ক্যানসারের কোষ প্রবেশ করানো হয়েছিল ইঁদুরের শরীরে। যার ফলে ইঁদুরগুলোর শরীরে টিউমার তৈরি হয়। রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ইঁদুরগুলার চিকিৎসা করানো হয়। এরপর দেখা যায়, ক্যানসার কোষগুলোর মৃত্যু ঘটলেও ক্রোমাটিন কণা ছোট টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এই কণাগুলি রক্তের মাধ্য়মে পৌঁছে যেতে পারে শরীরে অন্য়ান্য অংশে। সুস্থ কোষে প্রবেশ করে পুনরায় ক্যানসারের কোষে পরিণত হয়।
টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের গবেষকদল বলছে, মৃত ক্যানসার কোষগুলি মুক্ত ক্রোমাটিন কণা ছেড়ে দেয়ে। এই কণাগুলো সুস্থ কোষগুলোকে আক্রমণ করে ক্যানসার কোষে পরিণত করে। এই কোষগুলোর মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ক্রোমোজোমের সঙ্গে। এর ফলে নতুন করে টিউমার তৈরি হতে পারে।
এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে ইঁদুরগুলোর উপর চিকিৎসকরা রেসভেরাট্রল ও কপার প্রো-অক্সিডেন্ট ট্যাবলেট প্রয়োগ করেন। এই ট্য়াবলেট পাকস্থলিতে অক্সিজেন র্যাডিক্যাল তৈরি করে। তারপর তা দ্রুত শোষিত হয়ে রক্ত সঞ্চালনের পথে প্রবেশ করে, যা শরীরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ক্যানসার কোষের চলাচলে বাধা তৈরি করে। গবেষকরা তাদের গবেষণায় রেসভেরাট্রল ও কপার প্রো-অক্সিডেন্ট ট্যাবলেটকে ‘জাদু’ বলেছেন।
টাটা মেমোরিয়ালের দাবি, এই ট্যাবলেট সেবন করলে রোগীর শরীরে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মতো চিকিৎসা পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৫০ শতাংশ কম হবে। এমনকি, দ্বিতীয়বার ক্যানসার প্রতিরোধ করতে এই ট্যাবলেট ৩০ শতাংশ কার্যকর। এই ট্যাবলেটটি কার্যকর হতে পারে অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস ও মুখের ক্যানসারে।
আপাতত ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথোরিটির (এফএসএসআই) অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এই ওষুধ। অনুমোদন পেলে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে চলতি বছরের জুন-জুলাই মাস থেকেই। ডা. রাজেন্দ্র বাদভে আরও জানিয়েছেন, ক্যানসার চিকিৎসায় যখন কয়েক লাখ টাকা বা কোটি টাকা খরচ তখন সেখানে এই ওষুধের দাম হবে মাত্র ১০০ রুপি। অনুমোদন পেলেই এই ওষুধ সব জায়গায় পাওয়া যাবে।
এই ওষুধ ক্যান্সার চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারে কি না, তা জানতে এরই মধ্ই মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে এই ওষুধ কতটা কার্যকরী হবে, তা বুঝতে আরও বছর পাঁচ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.