11/25/2024 বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উগান্ডায় বহুমুখী উদ্যোগ
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:১৫
সারাবিশ্বে চোরাশিকার ও চোরাচালানের কারণে অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। উগান্ডায় সেই সমস্যার মোকাবিলা করতে কঠোর আইন, বিশেষ আদালত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
১৯৮৩ সালে চোরাশিকারীরা উগান্ডায় উন্মুক্ত পরিবেশে বাস করা শেষ সাদার্ন হোয়াইট রাইনো প্রজাতির গণ্ডার মেরে ফেলে। বিশাল অথচ নিরীহ এই প্রাণীর আয়ু ৪৫ পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু বেআইনিভাবে সেই গণ্ডারের খড়গ বিক্রির লোভে প্রাণীটিকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়।
এমন অপরাধ সত্ত্বেও হত্যাকারীদের শাস্তি হয় না বললেই চলে। আফ্রিকার প্রথম বিশেষ ওয়াইল্ডলাইফ কোর্টের গ্ল্যাডিস কামাসানইয়ু সেই পরিস্থিতি বদলাতে চান।
তিনি বলেন, ‘কোনো প্রাণীর চোরাশিকার হলে সেই প্রজাতি তাদের বিরুদ্ধে সেই অন্যায়ের ঘটনা রিপোর্ট করতে পারে না। এমনকি বেঁচে গেলেও কোনো প্রাণীর পক্ষে তা জানানো সম্ভব নয়। সেই কেসের ফলোআপও তারা করতে পারে না। আদলতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগও তাদের থাকে না। অন্যায়ের শিকার হয়ে মানুষের মতো নিজেদের কষ্ট তুলে ধরতেও পারে না।’
গ্ল্যাডিস এমন প্রাণীর জন্য সোচ্চার হয়ে সেগুলোর শক্তিশালী সহযোগী হয়ে উঠছেন। চোরাশিকার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা পেতে চিফ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি নিজে প্রায়ই কাম্পালা শহরের বাইরে একটি অভয়ারণ্য পরিদর্শন করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সাথে প্রায়ই যোগসূত্র পাওয়া যায়। সম্প্রতি চোরাচালানকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করা টিয়াপাখির করুণ অবস্থা সম্পর্কে জানা গেল।
চিড়িয়াখানার কর্মী ওনেসমাস মুতুউজা বলেন, ‘কয়েকটির উপরের পালক লোপ পেয়েছে, সেগুলো আর উড়তে পারে না। অনেক পাখির হাড়গোড় ভেঙ্গে গেছে। অনেকের প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, আমার মতে, এই সব প্রাণীর অবশ্যই ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত।’
২০১৭ সালে কাম্পালায় উগান্ডার ওয়াইল্ডলাইফ কোর্ট চালু করা হয়। বিচারপতি হিসেবে কামাসানইয়ু এক হাজারেরও বেশি মামলায় রায় দিয়েছেন। বন্যপ্রাণী নিয়ে বেআইনি বাণিজ্য যত বেশি সময় চলবে, তিনি তার বিরুদ্ধে তত লড়াই চালিয়ে যেতে চান।
গ্ল্যাডিস বলেন, ‘কতটা অবক্ষয় চলছে, আমি তা উপলব্ধি করেছি। ক্ষতির মাত্রা বুঝতে পারছি। প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য বিচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে আমার বিশাল ভূমিকা রয়েছে, সেটা বার বার টের পাচ্ছি। শুধু আজ আমার নিজের জন্য নয়, আমার পরে যারা আসবে, তাদের জন্য আমাকে সেটা করতে হবে।’
উগান্ডার ভূখণ্ডের প্রায় ১১ শতাংশ আইন করে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে হস্তক্ষেপ, কোনো প্রাণীর ক্ষতি বা হত্যার জন্য শাস্তির মাত্রা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু তা সবসময়ে যথেষ্ট হয় না। ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। জুলিয়াস ওবওনা নামের এক ওয়ার্ডেন সেই অঞ্চলে চোরাশিকারের গভীর শিকড় সম্পর্কে জানালেন।
তিনি বলেন, ‘এমনকি হাতির দিকে লক্ষ্য করেও বর্শা ছোড়া হয়। মহিষ, হিপোও রেহাই পায় না। যেসব মানুষ এমন বর্শা ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে অনেকে ৩০ থেকে ৪০ মিটার দূর পর্যন্ত সেটি নিক্ষেপ করতে পারে। আপনি চেষ্টা করে পাঁচ মিটার দূরেও ছুড়তে পারবেন না। এই সব মানুষ শৈশব থেকেই চোরাশিকারের কাজে লিপ্ত রয়েছে।’
বর্শা ছুড়ে এক মহিষ হত্যার দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রচলিত আইনি প্রণালীতে এমন কেসে অনেক বিলম্ব ঘটতো এবং তেমন কড়া শাস্তিও হতো না।
কিন্তু কামাসানইয়ুর আদালতে বন্যপ্রাণী-সংক্রান্ত অপরাধ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০২২ সালের এক ‘ল্যান্ডমার্ক' মামলায় তিনি হাতির দাঁতের চোরাচালানকারী এক দাগী আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। সংরক্ষণবাদীরা সেই রায়কে সার্বিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে।
উগান্ডা বণ্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষের চার্লস তুমওয়েসিগইয়ে বলেন, ‘এখন বিশেষ এই আদালতের কল্যাণে আমরা লক্ষ্য করছি, যে কিছু মামলাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা পুরো দেশ থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নিয়ে আসি। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির রায় দেখতে পাচ্ছি। যারা অপরাধ করতে চায়, তারা জানতে পারে যে অপরাধ করলে কাম্পালায় এই বিশেষ আদালত রয়েছে এবং সেখানে তারা কঠিন শাস্তি পেতে পারে। তাই আমার মতে, সেটা খুব ভালো হচ্ছে।’
কামাসানইয়ু মনে করেন, আদালতে হাজির করা কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তি লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণ ও সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝতেই পারে না। তাই বিচার বিভাগে তার ভূমিকার পাশাপাশি তিনি ‘হেল্প আফ্রিকা অ্যানিমেলস’ নামের এক অলাভজনক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সমাজে শিক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।
গ্ল্যাডিস বলেন, ‘তরুণদের ভবিষ্যতের সংরক্ষণবাদী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তারাই পরিবেশ, প্রকৃতি সংরক্ষণ করবে, প্রাণীগুলোর দেখাশোনা করবে। আজ আমাদের যা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা যদি তাদের প্রতি মনোযোগ না দেই, কম বয়সেই শিক্ষা না দেই, তারাও ভবিষ্যতে চোরাশিকারি হয়ে উঠতে পারে।’
সংরক্ষণের উদ্যোগের ফলে আজ উগান্ডায় ৩০টিরও বেশি সাদা গণ্ডার বেঁচে আছে। বিচারক হিসেবে কামাসানইয়ুর আশা, অন্য দেশগুলোও অদূর ভবিষ্যতে চোরাশিকার ও চোরাচালানের ক্ষেত্রে প্রাণী অধিকারকে কেন্দ্রীয় গুরুত্ব দেবে। সাদার্ন হোয়াইট রাইনোর মতো প্রাণী আবার মুক্ত পরিবেশে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.