11/23/2024 বাংলাদেশ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স যায় ভারতে
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৮ জানুয়ারী ২০২৪ ০৫:১৩
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসেবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। যদিও বেসরকারি হিসেবে এ পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিন। এত সংখ্যক বেকার থাকার পরেও বাংলাদেশের শ্রম বাজারে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন। জার্মান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
টকশোতে সাবেক এ কর্মকর্তা বাংলাদেশে কর্মরত বৈধ ও অবৈধ ভারতীয় শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে জানান, প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০০ কোটি ইউএস ডলার রেমিট্যান্স ভারতে চলে যাচ্ছে। যার কারণ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অনেক ভারতীয়রা কর্মরত আছেন। তবে এত সংখ্যক ভারতীয় বাংলাদেশে কাজের সুযোগ পাওয়ার কারণ সম্পর্কে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দোষারোপ করে তিনি।
তিনি বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশি শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা, যে কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশনের পরেও ইংরেজি বলতে পারে না।'
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার ঘাটতি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসাদ মোর্তজা বলেন, প্রথমত আমাদের সমস্যা শিক্ষাব্যবস্থায়। তারচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের দক্ষ স্কুল লেভেলে দক্ষ শিক্ষকের অভাব। আমরা যখন প্রাইমারী শিক্ষকদের ৮/১০ হাজার টাকা বেতন দিবো, তখন তাদের কাছে ভালো শিক্ষা চাওয়াটা বোকামি। দক্ষ শিক্ষকগণ অল্প টাকায় শিক্ষকতা করবেন না। ফলে প্রাথমিক লেভেলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা পায় না।
তবে ভার্সিটি লেভেলে একজন শিক্ষার্থী চান্স পাবার পরে মূল ক্লাস শুরুর আগে অন্তত ৬ মাস ভাষা শিক্ষা ও কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে সে বেসিক ট্রেনিং পেয়ে গেলে শহুরে ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যবধান দূর হবে। এতে কারোর ভার্সিটির পাঠক্রমে কোন সমস্যা হবে না এবং অন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।
তবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা প্রসঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে সবাই ইংরেজিতে কথা বলে, পরীক্ষা দেয়৷ যদি তাদের যোগ্যতা না থাকতো তাহলেতো শুধু ভারতীয় না, শ্রীলঙ্কা থেকেও আসতে পারতো।' তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ভারতীয়দের চেয়েও অনেক যোগ্য বাঙালী, বাংলাদেশি আছে যারা কাজ পাচ্ছে না, ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে অথবা ভূমধ্যসাগরে মরে পরে আছে।'
এদিকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যেসব বিদেশি কাজ করেন, তারা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি অর্থ নিজ দেশে পাঠিয়েছেন। আর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে কর্মরত বিদেশিরা ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ নিজ দেশে পাঠিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। আর এই টাকা পাঠানোর দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ভারতীয়রা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত অর্থবছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স গেছে ভারতে, যা দেশের বাইরে যাওয়া রেমিট্যান্সের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সরকারি এই রেমিট্যান্সের অঙ্ক বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে অনেক কম।
আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা যায়, রেমিট্যান্স আয়ে ভারতের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ তথ্য ভুল বলে দাবি করা হয়। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বেশ কয়েকটি খাতে অনেক ভারতীয় নাগরিক কাজ করেন। এ কারণেই প্রতি বছর ভারতেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্সে যায়। আর রেমিট্যান্স পাঠানোয় দ্বিতীয় স্থানে আছে থাইল্যান্ডের নাগরিকরা। এরপরেই চীনে ও জাপানের নাগরিকদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ থেকে এত সংখ্যক রেমিটেন্স বিদেশে চলে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে, দক্ষ কর্মীরা দেশে থাকতে না চাওয়া। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেকে চাকরির জন্য বিদেশে চলে যান। তারা দেশের কারখানায় কাজ করতে আগ্রহী নন। কিন্তু দক্ষ বিদেশি কর্মীরা কারখানার আশেপাশে থাকেন। যখনই প্রয়োজন হয় তখনই তারা সেবা দেন। তবে, বাংলাদেশে প্রচুর জনবল আছে। কিন্তু, দক্ষ ব্যবস্থাপকের অভাব।
তাছাড়া, বাংলাদেশে বৈধ পারমিট দিয়ে কাজ করলে প্রায় ২০ শতাংশের মত আয়কর দেয়া লাগে। আর, অবৈধভাবে টুরিস্ট ভিসায় কাজ করলেও, তেমন কোন সমস্যার পরতে হয়না তাদের। ফলে অধিকাংশ বিদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করে না।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.