11/24/2024 যুক্তরাষ্ট্রে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৬ জানুয়ারী ২০২৪ ০৫:৩৪
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে খুনি কেনেথ ইউজিন স্মিথকে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথমবারের মতো বিতর্কিত পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো। ১৯৯৬ সাল থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন স্মিথ।
এর আগে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে ৫৮ বছর বয়সী খুনি স্মিথের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে আসামি কেনেথ স্মিথের করা আবেদনটি গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) খারিজ করে দেয় আদালত। আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া একটি নিষ্ঠুর এবং অস্বাভাবিক পন্থা। এ দণ্ড কার্যকরের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল আলাবামার গভর্নর কে আইভি, সেই সময় অনুয়াযী স্মিথকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গতকাল স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছিল, পরবর্তী ৩০ ঘণ্টার মধ্যে দণ্ড কার্যকর করা হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৮ বছর বয়সী স্মিথকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ৮টা ২৫ মিনিটে মৃত ঘোষণা করা হয়। অ্যাটমোরে ‘উইলিয়াম সি. হলম্যান কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি’-তে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। উইলিয়াম সি. হলম্যান কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি হলো আলাবামার অ্যাটমোরে অবস্থিত একটি জেলখানা।
কেনেথ ইউজিন স্মিথ ১৯৮৯ সালে এক ধর্ম যাজকের স্ত্রী এলিজাবেথ সেনেটকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।
এলিজাবেথ সেনেটকে খুন করার জন্য কেনেথ স্মিথ এবং তাঁর এক সহযোগীকে ভাড়া করেছিলেন সেনেটের স্বামী চার্লস সেনেট। আইনজিবীরা বলেছেন, স্ত্রীর বিমার টাকা পেতে এ ষড়যন্ত্র করেছিলেন চার্লস। পরে তিনি আত্মহত্যা করেন। এ হত্যার ঘটনায় স্মিথের সহযোগীকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর আগেও ২০২২ সালে আলাবামা প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে স্মিথের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিল।
তখন দণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। ২০২৩ সালের মে মাসেও দ্বিতীয় দফায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রচেষ্টা চালানোর এ সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন স্মিথ। এরপর অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর কে আইভি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া নতুন করে পর্যালোচনা করার ঘোষণা দেন এবং এর কয়েক মাস পর নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
অক্সিজেন ছাড়া নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে কোষগুলো ভেঙে যায় এবং মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বিশেষভাবে তৈরি একটি মাস্ক পরানো হয় আসামীকে। এ মাস্কের ভেতর দিয়ে অক্সিজেন চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। মাস্কটি নাইট্রোজেনভর্তি একটি সিলিন্ডারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এর আগে আদালতে বলা হয়েছিল, নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের ফলে স্মিথ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জ্ঞান হারাবেন এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁর মৃত্যু ঘটবে। কিন্তু কিছু চিকিৎসক এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছিলেন। তারা সতর্ক করেছিলেন, এই পদ্ধতিতে মারাত্বক খিঁচুনি হতে পারে। এ ছাড়া এমন অবস্থা হতে পারে যেখানে, ওই ব্যক্তিকে দেখে মনে হবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিন্তু আসলে তিনি সজাগ।
এ ঘটনায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র বলেছেন, “প্রথম চেষ্টাতেই স্মিথকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে, আলাবামা তাঁকে ‘গিনিপিগ’ হিসেবে ব্যবহার করছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার এ পদ্ধতি আগে কখনো পরীক্ষা করা হয়নি, যা বিশ্ব দেখছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্য এবং অন্য দুটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়ার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে, কারণ প্রাণঘাতী ইনজেকশনে ব্যবহৃত ওষুধগুলো খুঁজে পাওয় কঠিন হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আলাবামা স্মিথ শেষ ৪৮ ঘণ্টা কীভাবে কাটিয়েছেন তার বিররণ প্রকাশ করা হয়েছে। স্মিথকে তাঁর পরিবারের সদস্য, দুই বন্ধু, তার একজন উপদেষ্টা ও আইনজিবীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। তিনি দুটি বিস্কুট, ডিম, আঙ্গুরের জেলি, আপেল সস এবং কমলার জুস দিয়ে নাস্তা করেন। তাঁর শেষ খাবার ছিল স্টেক এবং ডিম।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.