11/22/2024 আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন
মুনা নিউজ ডেস্ক
৮ জানুয়ারী ২০২৪ ০৫:৫০
বাংলাদেশে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয় লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল ৭ জানুয়ারি, রোববার থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্সের পাশাপাশি আরও অনেক সংবাদমাধ্যমের খবরের শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন।
বেশিরভাগ প্রতিবেদনে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন, নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতা ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, ভোটের নিম্ন হার এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির শিরোনাম ছিল 'বাংলাদেশের নির্বাচন: বিতর্কিত ভোটে চতুর্থ মেয়াদে বিজয়ী হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'।
বিবিসি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত ভোটের হার (৪০ শতাংশ) নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। সংখ্যাটি 'বাড়িয়ে বলা হয়ে থাকতে পারে' বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, আওয়ামী লীগের বিজয়ে প্রায় (ডি ফ্যাক্টো) 'একদলীয়' শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানায় এই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। পরবর্তী ও টানা চতুর্থ মেয়াদ শেষে ৮১ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্তরসূরি কে হবেন, সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, 'বিরোধী দলের বর্জন করা নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদ নিশ্চিত করলেন'।
সিএনএন জানিয়েছে, রোববারের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। পোলিং বুথে আগুন ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগে দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তারা।
সিএনএন আরও জানায়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার একটি একদলীয় সরকার ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সমালোচকরা রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আজ সোমবার সকালে রয়টার্সের শিরোনাম, 'প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার টানা চতুর্থ মেয়াদ নিশ্চিত করলেন'।
রয়টার্স প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বেশিরভাগ বাংলাদেশি রোববারের সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছেন। সিএনএনের মতো রয়টার্সও মানবাধিকার সংস্থার বরাতে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছে।
বার্তাসংস্থা এএফপির শিরোনাম, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে পুনর্নিবাচিত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের মতো ফরাসি এই বার্তাসংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বিএনপিসহ একাধিক বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন ও নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও সহিংসতার বিষয়গুলো।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক পিয়েরে প্রকাশের বরাতে এএফপি নির্বাচনের আগে জানায়, 'শেখ হাসিনার সরকার নিশ্চিতভাবেই "কয়েক বছর আগের তুলনায় কম জনপ্রিয়। কিন্ত তা সত্ত্বেও ব্যালট বক্সে ভোট দেওয়ার মতো খুব বেশি বিকল্প নেই বাংলাদেশিদের হাতে"। 'এই দুটি বিষয় সমন্বিত হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে', মন্তব্য করেন তিনি।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার আজকের শিরোনাম 'ভোটের হার নিয়ে বিতর্কের মাঝে বাংলাদেশে নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী শেখ হাসিনা'।
বিশ্লেষকদের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই নির্বাচনকে ঘিরে একমাত্র আগ্রহের বিষয়টি ছিল ভোটের হার। পশ্চিমা সরকারগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছিল। বিশ্লেষকদের বরাতে আল জাজিরা ৪০ শতাংশ ভোটের হার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাখাওয়াত হোসেনের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, '৪০ শতাংশ ভোট পরেছে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমকে ব্রিফ করার সময় শুরুতে ২৮ শতাংশ উল্লেখ করলেও হঠাৎ করেই এই সংখ্যা পরিবর্তন করে ৪০ শতাংশ বলেন।'
ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান শারমীন মুরশিদ আল জাজিরাকে জানান, এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোটের হার ২৭ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হওয়ার বিষয়টি 'হাস্যকর' এবং এতে নির্বাচন কমিশনের 'সুনাম বড় আকারে ক্ষুণ্ণ হয়েছে'।
যে বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বড় আকারে এসেছে, তার সঙ্গে নির্বাচনের সরাসরি সংযোগ না থাকলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়।
চলতি মেয়াদে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অনুপযোগিতা ও আওয়ামী লীগেরই নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হওয়া নিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছে গণমাধ্যমগুলো।
আগামীতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন আরও বেড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ নেতিবাচকভাবেই বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উঠে এসেছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.