11/30/2024 বার্বাডোসের প্রথম মসজিদের নির্মাতা ছিলেন যে বাঙালি মুসলিম
মুনা নিউজ ডেস্ক
৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:০৭
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র বার্বাডোস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রত্ন বলা হয়। পর্যটন, কৃষি ও মাছ শিকার বার্বাডোসের প্রধান আর্থিক খাত। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ব্রিজটাউন দেশটির বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর ও রাজধানী।
বার্বাডোসের মোট আয়তন ৪৩৯ বর্গকিলোমিটার। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে মোট জনসংখ্যা দুই লাখ ৬৭ হাজার ৮০০। বার্বাডোসের বেশির মানুষ খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। দেশটিতে চার হাজার মুসলমান রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৫ শতাংশ। তবে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
ধারণা করা হয়, প্রায় সাত হাজার বছর আগে বার্বাডোস দ্বীপের সৃষ্টি হয়। গবেষকরা দ্বীপটিতে খ্রিস্টপূর্ব ১৬ শতকের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। ইউরোপীয়দের মধ্যে স্প্যানিশরাই সম্ভবত সর্বপ্রথম বার্বাডোসে পা রাখে আর ব্রিটিশরা প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলে।
বার্বাডোস প্রায় তিন শতাব্দী ধরে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯৬৬ সালে দেশটি যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্য দ্বীপগুলোর মতো বার্বাডোসেও ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল আফ্রিকান দাসদের মাধ্যমে। ঔপনিবেশিক শাসকরা ক্যারিবীয় অঞ্চলের কৃষি খামার ও খনিতে কাজ করতে বিপুল পরিমাণ দাস আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বন্দি করে নিয়ে এসেছিল।
ধারণা করা হয়, তাদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মুসলিম ছিল। কিন্তু ইসলামচর্চায় কঠোর বিধি-নিষেধ এবং ধর্মান্তরে বাধ্য করায় তারা মুসলিম পরিচয় রক্ষা করতে পারেনি। তবে বার্বাডোসে খ্রিস্টীয় ১৭ শতক পর্যন্ত মুসলমানদের অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বার্বাডোসে ইসলামের নবযাত্রা শুরু হয়েছিল একজন বাঙালি মুসলমানের মাধ্যমে। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন। ব্যবসায়ী বিশারত আলী দেওয়ান ১৯১০ সালে বার্বাডোসে যান এবং পরিবার নিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন। বিশারত আলীর পথ অনুসরণ করে বার্বাডোসে আসেন রুহুল আমিন, আবদুল গফুর ও নাসরুল হক। তাঁরা সবাই বাঙালি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কিছু গুজরাটি মুসলিম ব্যবসায়ীও বার্বাডোসে যান। বাঙালি ও গুজরাটি এসব মুসলমানদের বংশধররা এখনো বার্বাডোসে বসবাস করেন।
বাঙালি মুসলিম বিশারত আলী ও তাঁর পরিবার বার্বাডোসে ইসলাম প্রচার, মাদরাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাদের অর্থায়ন ও সহযোগিতায় দেশটির প্রথম মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। গত শতাব্দীর ৫০-এর দশকে যখন বার্বাডোসে ‘জামে মসজিদ’ নামে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন প্রথম আজান দিয়েছিলেন বিশারত আলীর নাতি আকরাম আলী। তিনিই ছিলেন মসজিদের প্রথম মুয়াজ্জিন ও তত্ত্বাবধায়ক। এর সাত বছর পর বার্বাডোসের দ্বিতীয় মসজিদ (মদিনা মসজিদ বা সিটি মসজিদ) প্রতিষ্ঠিত হলে আকরাম আলীর ভাই আনোয়ার আলী তাঁর মুয়াজ্জিন ও তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। আমৃত্যু তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯১০ সালে বাঙালি মুসলমানদের মাধ্যমে বার্বাডোসে ইসলামের নতুন যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এসব মুসলমান পেশায় ব্যবসায়ী হওয়ায় ইসলামী শিক্ষায় তাঁরা অনগ্রসর ছিলেন। ধর্মীয় আবেগ ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষাই ছিল তাঁদের পুঁজি। মূলত বার্বাডোসে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটে গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে।
১৯৪৭ সালে হাফেজ মাওলানা আহমদ দাউদ পাণ্ডুর (রহ.) বার্বাডোসে গমন করেন। তিনি ছিলেন গুজরাটের ডাভেল মাদরাসার শিক্ষার্থী এবং উপমহাদেশের বিখ্যাত তাফসিরবিদ মাওলানা আহমদ আলী লাহোরি (রহ.)-এর শিষ্য। তিনিই বার্বাডোসে প্রথম স্থায়ী মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তাঁর এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন বাঙালি ও গুজরাটি মুসলিম ব্যবসায়ীরা। ১৯৫২ সালে মাওলানা দাউদ পাণ্ডুর (রহ.)-এর উদ্যোগেই বার্বাডোসের প্রথম মাদরাসা ‘কুওয়াতুল ইসলাম’ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর বিনা বেতনে এই মাদরাসায় পাঠদান করেন। হাফেজ আহমদ আলী (রহ.) ছিলেন মাদরাসার প্রথম প্রধান শিক্ষক।
১৯৭১ সালে ব্রাদার দাউদুল হক আধুনিক ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র ‘দি ইসলামিক টিচিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৬ সালে মাওলানা ইউসুফ পাপরিওয়ালা জামে মসজিদের ইমাম ও কুওয়াতুল ইসলাম মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে বার্বাডোসে আসেন। বয়সে তরুণ এই আলেম বার্বাডোসে দাওয়াত ও তাবলিগের প্রসার, দ্বিনি শিক্ষার বিস্তার ও আধুনিকায়ন এবং মুসলমানদের সংঘবদ্ধ করতে অনবদ্য অবদান রাখেন।
বার্বাডোসে মুসলমানরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সুযোগ পায়। বর্তমানে দেশটিতে পাঁচটি মসজিদ, একাধিক মুসল্লা (নাজামের স্থান), ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র ও সংগঠন রয়েছে। ইসলামী কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কুওয়াতুল ইসলাম মাদরাসা, ইসলামিক একাডেমি অব বার্বাডোস ও আল ফালাহ মুসলিম স্কুল অন্যতম। সংগঠনগুলো মধ্যে দ্য বার্বাডোস মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন, দ্য মদিনাহ ফাউন্ডেশন, কনসার্নড ফর দ্য ফিউচার-বার্বাডোস, স্ট্রিট দাওয়াহ বার্বাডোস অন্যতম।
তথ্যঋণ : মুসলিম গো ট্রাভেল ডটকম, আম্মার বিন আজিজ আহমদ ডটকম, মুসলিম পপুলেশন ডটকম
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.