11/23/2024 যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে গ্রেফতার ভারতীয়
মুনা নিউজডেস্ক
৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪০
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর এ নিয়ে যে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে লেখা হয়েছে যে পরিকল্পনা করা ওই হত্যার জন্য গ্রেফতার ব্যক্তি একজন ভারতীয় নাগরিক, তিনি একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক অভিযোগপত্র প্রকাশ করার পরেই ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা ধরা পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে ৫২ বছর বয়সী নিখিল এখনো ওই দেশেই আটক রয়েছেন।
নিখিল গুপ্তা নগদ এক লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে ভাড়াটে খুনিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য নিয়োগ করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওই ভাড়াটে খুনি আসলে ছিলেন একজন ছদ্মবেশী মার্কিন ফেডারেল অ্যাজেন্ট।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর এটা উল্লেখ করেনি যে কাকে হত্যার পরিকল্পনার জন্য ওই ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে চেক প্রজাতন্ত্রে।
তবে কয়েক দিন আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, ভারতে ঘোষিত সন্ত্রাসী গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই ঘটনাতেই ধরা পড়েছেন ওই ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা।
পান্নু ভারতে ২০২০ সাল থেকেই ঘোষিত সন্ত্রাসী আর তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দ্বৈত নাগরিক।
‘বিচলিত’ প্রেসিডেন্ট বাইডেন
এই বিষয়ে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছিল বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এতটাই বিচলিত করেছিল যে সিআইএ-এর ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস আর ডিরেক্টর অফ ন্যাশানাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাভ্রিল হেইনসকে তিনি ভারতে পাঠিয়েছিলেন।
তারা বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানান, পুরো ঘটনায় একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিবিসির এশিয়ান নেটওয়ার্কের সাথে কথা বলতে গিয়ে পান্নু প্রশ্ন তোলেন, ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার ফলাফলের মুখোমুখি হতে ভারত প্রস্তুত আছে তো?’
তিনি আরো বলেন, যারাই তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে, তারা ভারতীয় কূটনীতিক হোন অথবা ‘র’ (ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা), সবাইকেই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
কয়েক মাস আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ তুলেছিলেন, তার দেশের খালিস্তানপন্থী শিখ নেতাকে হত্যা করেছে ভারত সরকারের অ্যাজেন্টরা।
ওই ব্যাপারে কানাডার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য আছে বলেও দাবি করেছিলেন ট্রুডো। ওই অভিযোগ তোলার পরে ভারতের সাথে কানাডার এক অভূতপূর্ব কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
যেভাবে গ্রেফতার হন নিখিল গুপ্তা
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নিখিল আন্তর্জাতিক মাদক ও অস্ত্র পাচারের সাথে জড়িত ছিলেন এবং মে মাসে ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা তাকে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগ করেছিলেন।
অভিযোগ করা হয়েছে, নিখিল গুপ্তাকে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক সহযোগীর সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এরপর নিউ ইয়র্ক শহরে ওই হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে এমন একজন ভাড়াটে খুনির সাথে দেখা করার চেষ্টা করেন নিখিল গুপ্তা। কিন্তু ওই ভাড়াটে খুনির বদলে একজন ছদ্মবেশী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল, যিনি বলেছিলেন যে তিনি এক লাখ ডলারের বিনিময়ে ওই হত্যাকাণ্ড চালাতে পারবেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, গত ৯ জুন এক সহযোগীর মাধ্যমে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার অগ্রিম দেন নিখিল গুপ্তা। সেই লেনদেনের ছবিও অভিযোগপত্রে যুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন বিচার দফতর প্রাথমিক অভিযোগ প্রকাশের পরই ৩০ জুন চেক প্রজাতন্ত্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিখিল গুপ্তাকে গ্রেফতার করে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে তারা এখনো তাকে আটক করে রেখেছে।
এর আগে কানাডায় খুন হন শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার
কানাডায় ‘খুন’ হন আরেক শিখ নেতা
চলতি বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে তার দেশের কাছে।
ট্রুডো ওই অভিযোগ তোলার পরে ভারত ও কানাডার মধ্যে এক অভূতপূর্ব কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কানাডার অভিযোগকে ভারত ‘ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছিল।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যখন নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তদন্তে সহযোগিতা চেয়েছিলেন, তখন ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়।
ভারত কেবল ওই অভিযোগই প্রত্যাখ্যান করেনি, এমন কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে যা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে এখন ভয়াবহ অবনতি হয়েছে।
দিল্লিতে কানাডিয়ান হাইকমিশনে কূটনীতিকদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল ভারত। কানাডায় ভারতীয় হাইকমিশনে উপস্থিত ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যার চেয়ে তাদের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছে ভারত।
কানাডা ভারতের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে এবং এরপর নিজেদের ৪১ জন কূটনীতিককে ফিরিয়ে নিয়েছে।
ভারত কানাডিয়ানদের জন্য ই-ভিসা পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছিল, যা সম্প্রতি দু’মাস পরে আবারো চালু হয়েছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.