11/23/2024 বাংলাদেশ সরকারের তিন শর্ত : বন্ধ হতে পারে অর্ধলাখ বেসরকারি স্কুল
মুনা নিউজ ডেস্ক
২০ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৩০
বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কিন্ডাগার্টেনগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ লক্ষ্যে ১১ নভেম্বর ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০২৩’ গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে বিধিমালায় থাকা তিনটি শর্ত মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের আশঙ্কা, এতে প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের একাধিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্ধারিত জমি বা ভাড়া ভবনে বিদ্যালয় পরিচালনা, পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিৎক্ষককে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাখা এবং পাঠদান ও নিবন্ধন অনুমতির জন্য পৃথক আবেদন ও অর্থ খরচের শর্ত দেওয়া হয়েছে বিধিমালায়। প্রায় সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন শর্তের প্রতিটি পূরণ করতে ব্যর্থ হবে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের পাশাপাশি বেকার হবেন শিৎক্ষক-কর্মচারীরা, পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হবে শিক্ষার্থীদের।
বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি)-২০২২ তথ্য মতে, ৬৫ হাজার ৫৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশে ছয় হাজার ১৪০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে।
কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৭৮। এ ছাড়া এনজিও ও অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো প্রায় আড়াই হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু আছে। তবে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের দাবি, অনিবন্ধিত এমন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০ হাজার। যেখানে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক ও প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘এটি কিন্ডারগার্টেন বন্ধের পাঁয়তারা, বেকারত্ব বাড়ানোর বিধিমালা। জায়গার শর্তটি সবচেয়ে বড় অসংগতি তৈরি করেছে। মেট্রোপলিটন এলাকায় বিদ্যালয়ের জন্য দশমিক শূন্য আট একর জায়গার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের কারো পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না। বিশেষ করে মতিঝিল এলাকায় এই পরিমাণ জমিতে আট থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে স্কুলের জন্য ভবন ভাড়া পাওয়া যাবে না। এই এলাকায় বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রথমে সব শর্ত পূরণ করে এক বছরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ফি দিয়ে পাঠদান অনুমতি নিতে হবে।
এরপর পাঠদান কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে পরবর্তী সময়ে ১৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন আবেদন করতে হবে।
তিনি বলেন, নিজেদের অর্থায়নে স্কুল পরিচালনা করে সেই অর্থের তদারকি ও নিয়োগপ্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন অন্য স্কুলের প্রধান শিৎক্ষক, এটা আত্মঘাতী। আবার একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের আশপাশে প্রায় ১০০ বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল আছে। সবগুলো স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে একজন প্রধান শিৎক্ষক নিযুক্ত থাকলে তিনি কিভাবে সব সভা, নিয়োগ বোর্ড ও অন্যান্য কাজে সময় দেবেন। নিজ স্কুল পরিচালনার সময় কোথায় পাবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘এই নীতিমালা বাধা নয়, একটি কাঠামো ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ। যেখানে সেখানে কিন্ডারগার্টেন নামে স্কুল খুলবেন আর যাচ্ছেতাইভাবে চালাবেন তা হতে পারে না। বিধিমালাটি এতটাই সহজ করা হয়েছে যে বিদ্যালয় নিবন্ধনের জন্য এখন আর ঢাকায় আসতে হবে না, নিজ জেলা থেকেই করা যাবে। তাদের যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা দেব। তবে সরকারের যে নির্দেশ, সব শর্তই মানতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে যথেষ্ট পরিমাণ সরকারি প্রাথমিক স্কুকসহ পর্যাপ্ত শিৎক্ষক আছে। এরই মধ্যে ৩৭ হাজার শিৎক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আরো শিৎক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। দুর্গম এলাকায় বা কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকট থাকলে সেখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে সরকার উদ্যোগ নেবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-১ শাখার উপসচিব নাজমুন্নাহার বলেন, সরকারি বিধান মেনেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ধীরে ধীরে সবাইকে নিবন্ধন নিতে হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বাইরে থাকবে তাদের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.