11/23/2024 ধোঁয়াশাচ্ছন্ন দিল্লি: বন্ধ করা হলো স্কুল
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩ নভেম্বর ২০২৩ ১১:২৫
দিন দিন ভারতের নয়াদিল্লির দূষণ পরিস্থিতি আরো খারাপ পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে। বাতাসের গুণমান ইতিমধ্যে ‘খারাপ’ থেকে ‘অত্যন্ত খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে আবার ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হচ্ছে দেশটির রাজধানী। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) জানিয়েছে, শুক্রবার নয়াদিল্লির বেশির ভাগ জায়গায় বাতাসের গুণমান (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা এআইকিউ) ‘অত্যন্ত খারাপ’। সর্বোপরি শুক্রবার রাজধানীর একিউআই ৪৭১।
গত শুক্রবার থেকে বাতাসের গুণমান খারাপ পর্যায়ে ছিল। যত দিন এগিয়েছে, সেই পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়েছে। শুক্রবার সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
মনে করা হচ্ছে, এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত রাজধানীতে বাতাসের গুণমান সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে শুক্রবার। গত শুক্রবার একিউআই ছিল ২১৬, শনিবার ৩০৪, রবিবার ৩২৫, সোমবার ৩৪৭, মঙ্গলবার ৩৫৯, বুধবার ৩৬৪, বৃহস্পতিবার ছিল ৪২২। একিউআই ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বাতাসের গুণগত মান ‘ভালো’। ৫১-১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’। ১০১-২০০ হলে ‘মোটামুটি স্বাভাবিক’। ২০১-৩০০ হলে ‘খারাপ’। ৩০১-৪০০ হলে ‘খুব খারাপ’। ৪০১-৫০০ হলে ‘খুব খুব খারাপ’।
এদিকে দূষণ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের (গ্র্যাপ) স্টেজ থ্রি চালু করেছে। চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে গ্র্যাপকে। স্টেজ-১ (খারাপ, একিউআই ২০১-৩০০), স্টেজ-২ (খুব খারাপ, একিউআই ৩০১-৪০০), স্টেজ-৩ (মারাত্মক, একিউআই ৪০১-৪৫০), স্টেজ-৪ (অত্যন্ত মারাত্মক, একিউআই ৪৫০-এর ওপরে)।
পৌরসভার পদক্ষেপ
আজ শুক্রবার সকালে ঘন ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে যায় নয়াদিল্লির বহু এলাকা। দৃশ্যমানতাও নেমে আসে। ধোঁয়াশা পরিস্থিতি কাটাতে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় পানি ছেটানোর কাজ শুরু করেছে দিল্লি পৌরসভা।
বাতাসের গুণমান উন্নতির জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে পৌরসভা সূত্রে খবর। সিপিসিবি জানিয়েছে, শুক্রবার লোধী রোড, জহাঙ্গিরপুরী, আরকে পুরম, ইন্দিরা গাঁন্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩-এ বাতাসের গুণমানের যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ওই সব এলাকায় একিউআই পৌঁছেছে যথাক্রমে ৪৩৮, ৪৯১, ৪৮৬ এবং ৪৭৩।
রাজধানীতে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সব প্রাথমিক স্কুলগুলো ৩ ও ৪ নভেম্বর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পরিস্থিতির মোকাবেলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন নির্মাণকাজগুলোর ক্ষেত্রেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘রেড লাইট অন, গাড়ি অফ’ প্রচার কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সিএনজি পরিচালিত এক হাজার বেসরকারি বাস রাজধানীর রাস্তায় নামানো হবে।
ইতিমধ্যে বিএস-৩ পেট্রল এবং বিএস-৪ ডিজেলচালিত গাড়ি চালাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ থেকেও ডিজেলচালিত গাড়ি রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তায় এই দুই ধরনের গাড়ি নিয়ে নেমে যদি ধরা পড়েন চালকরা, তা হলে তাঁদের মোটা অঙ্কের জরিমানার কথাও বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে চালকদের। দিল্লি পরিবহণ দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে।
এ ছাড়া দিল্লিবাসীকে গাড়ির পরিবর্তে বেশি করে মেট্রো ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণের যাতে কোনো রকম অসুবিধা না হয়, তাই ২০টি অতিরিক্ত রেক নামানো হয়েছে।
অন্যদিকে হরিয়ানার গুরুগ্রামে দূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। উত্তর প্রদেশের নয়ডায় সেক্টর ১, ৬২ ও ১১৬-তে দূষণের মাত্রা ‘অত্যন্ত খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশকে শস্যের গোড়া পোড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়। যার জেরে শীতের মৌসুমে দিল্লি হয়ে ওঠে ‘গ্যাস চেম্বার’। ফলে এই মৌসুমে রাজধানী যাতে ‘গ্যাস চেম্বার’ না হয়ে ওঠে, তাই আগেভাগেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকার।
কিন্তু তার পরও নভেম্বরের শুরুতেই রাজধানীর বাতাসের গুণগত মান খারাপ হতে শুরু করায় চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের। বাতাসের গুণগত মান খারাপ হতে থাকায় মঙ্গলবার দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশ সরকারকে দূষণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে দিল্লি ও চার রাজ্যকে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.