11/23/2024 শরণখোলায় এবার মূল বাঁধে ভয়াবহ ধস
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪০
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় এবার মূল বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে সিসি ব্লকসহ বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট বলেশ্বর নদে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া মূল বাঁধের আরো ব্যাপক এলাকায় বিশাল ফাটল ধরেছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙনরোধে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে জিও ব্যাগে বালু ভরে বিকেল ৩টার দিকে ডাম্পিং শুরু হয়েছে। পরবর্তী সময়ে স্থায়ী নদীশাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে অব্যাহত ভাঙনে স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টেকসই বেড়িবাঁধটির। অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে গাবতলা বাজার থেকে বাবলাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা।
এ ছাড়া একেবারে ভাঙনের মুখে রয়েছে বাঁধের পাশে অবস্থিত আশার আলো মসজিদ কাম সাইক্লোন শেল্টার এবং অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরণখোলা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ। এরপর সরকার বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে ৬২ কিলোমিটার বাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ‘সিএইচডাব্লিউই’ নামে চীনা একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু করে টেকসই বাঁধের কাজ।
তিন বছরে পুরো বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হতে লাগে প্রায় সাত বছর। তিন দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বরে বাঁধটি পাউবোর কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
কিন্তু হস্তান্তরের আগমুহূর্তে এই বিশাল ভাঙনে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ফেরানো যাবে না। মূল বাঁধসহ বাঁধের পাশের স্থাপনা রক্ষা করতে হলে টেকসই নদীশাসন দরকার।
তা না হলে এই বাঁধ জনগণের কোনো কাজে আসবে না।
সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত ভাঙন শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাত থেকেই। বুধবার সকাল ও দুপুরে জোয়ার ও ভাটির টানে সেই ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রথমে সেনাবাহিনীর জরুরিভাবে নির্মিত রিং বাঁধের বহিরাংশের কমপক্ষে ছয় বিঘা জমি গাছপালাসহ বলেশ্বরে তলিয়ে যায়। এরপর আশার আলো মসজিদ কাম সাইক্লোন শেল্টার থেকে ডিএস-৭ স্লুইসগেট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ফুট রিং বাঁধ ধসে যায়। পরে নতুন করে আরো প্রায় ৫০০ ফুট রিং বাঁধ ভেঙে মূল বেড়িবাঁধে আঘাত হানে। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৯০০ ফুট এলাকাজুড়ে মূল বেড়িবাঁধে বিশাল ফাটল ধরে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হেমায়েত হাওলাদার, রুস্তম হাওলাদারসহ অনেকেই জানান, বলেশ্বর নদের ভাঙনে তাদের এলাকার শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
সাউথখালী ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, ভাঙন ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করছে। সিসি ব্লকসহ মূল বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট ধসে গেছে। বিশাল এলাকায় ফাঁটল ধরেছে। গাবতলা বাজার থেকে বাবলাতলা প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় স্থায়ী নদীশাসন প্রয়োজন। বালুর বস্তা ফেলে সাময়িক রক্ষা পেলেও তা স্থায়ী হবে না। কারণ এর আগেও কয়েকবার এভাবে বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ভাঙনরোধে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং শুরু হয়েছে। আপাতত এক হাজার ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে।
স্থায়ী নদীশাসনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলেশ্বর নদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নদীশাসনের জন্য ডিপিপি তৈরি করে আরো দুই বছর আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিইআইপি কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বরে আমাদের কাছে বাঁধ হস্তান্তর করবে। হস্তান্তর হলে পরবর্তী নময়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আসাদুল্লাহ বলেন, ‘৬২ কিলোমিটার মূল বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। আমাদের এখানে আর কিছুই করার নেই। এখন যা করার পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.