02/03/2025 সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় আলেম সমাজ
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:১২
সাহিত্য মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি, ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। মানবজাতির শুভবুদ্ধির উজ্জীবনী শক্তি। সাহিত্যিকের কাজ হচ্ছে সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিরাজমান অপসস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে উন্নত ও রুচিসম্মত সংস্কৃতির সুপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলা। মানুষের মন ও চিন্তাধারাকে নর্দমায় পতিত হওয়া থেকে ফিরিয়ে কল্যাণের দিকে উদ্দীপ্ত করা ও মানব উদ্দীপনার আবহ তৈরি করা।
সাহিত্য হলো, সমুদ্রের তলদেশে বসবাস করা ঝিনুক। এ ঝিনুক একটা সময় তীরে ওঠে আসে এবং বৃষ্টিকণার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। যখনই সে তার গর্ভে বৃষ্টিকণা ধারণ করে তখনই তার গর্ভে আগমন ঘটে এক অমূল্য রত্নের।
সাহিত্য আঙিনায় যখন আমাদের সরব পদচারণা শুরু হবে, তখন সেখান থেকে উদ্ভাসিত হবে গল্প-উপন্যাস, আর কবিতার মতো অমূল্য রতœ।
সংস্কৃতি তো জীবনের ক্ষেত্রে আরো ব্যাপক, আরো গভীর ও অতলস্পর্শী। শোভনশীল ও ঔদার্যে বিভূষিত। জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি। মানুষ কিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর নির্দেশিত পথে জীবনের সাফল্য অর্জন করবে, তার চূড়ান্ত লক্ষ্য পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার পথে অগ্রসর হবে- সংস্কৃতি সেই পথনির্দেশক। এক কথায়, সংস্কৃতি হচ্ছে মানব জীবনের চূড়ান্ত সাফল্যের পাথেয়। দ্বীন ও দুনিয়ার মহোত্তম সমন্বয়। এর ব্যাপকতাও জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। যে যত বেশি সংস্কৃতিবান, সে ততই পরিশুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও সফল মানুষ।
মানবজাতির ইতিহাসে পরম বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন মানুষ হচ্ছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:। তিনি ছিলেন এক নয়া সংস্কৃতির নির্মাতা। শুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতার এক দুর্লভ মহিমায় বিভূষিত। অথচ তাঁর সমাজ ও সময়, তার যুগ ও প্রতিবেশী ছিল পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। হজরত ঈসা আ:-এর পর থেকে প্রায় ৬০০ বছর পর্যন্ত মানব জাতি দিশেহারা লাগামহীন ঘোড়ার মতো দিগি¦দিক ছুটছিল। এ দীর্ঘ সময় মানবসমাজ নিষ্পিষ্ট ছিল পঙ্কিলতা, নির্মমতা, অস্বচ্ছতা, অসততা, অসাধুতা, পৌত্তলিকতা ও পেশিশক্তিমত্তার এক অসহনীয় অনাচার ও দুর্বৃত্তপরায়ণতায়।
এ যুগ সন্ধিক্ষণে তাঁর আগমন ঘটে। গোটা মানবমণ্ডলীর কল্যাণকামী হয়ে তিনি যখন দ্বীন প্রচারে লিপ্ত, শত বাধা-বিঘেœর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল ও সুদৃঢ়। অথচ তাঁর কোনো শিক্ষক ছিল না। তিনি জাগতিক কোনো পাঠ গ্রহণ করেননি। নবুওয়তের আগে প্রকৃতিই ছিল তার শিক্ষক। তাঁর প্রজ্ঞা, তাঁর বিচক্ষণতা, তাঁর ঔদার্য, তাঁর বিবেচনাবোধ তাঁর সময় ও পরিবেশ থেকে তাঁকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। সেই সমাজের সম্মানিত ও মর্যাদাবান পুরুষ হিসেবে, পরিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দুর্লভ সম্মানে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। ভাষার শুদ্ধতা, সাংস্কৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও মানসিক ঔজ্জ্বল্যে তিনি ছিলেন এক মহিমান্বিত মানুষ।
নবুওয়ত লাভের পর স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে ক্ষেত্রেও তিনি এক প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, সুবিবেচক, ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ মানুষ। জীবনের কোনো কালিমা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাই সাহিত্য-সংস্কৃতির মতো জীবনবোধে নিবিষ্ট ও মানুষের সহজাত এবং আত্মলগ্ন জীবনাচরণের সমন্বয়ক উপাদান দুটোও তাঁর স্পর্শে পল্লবিত হয়েছে।
রাসূল সা: সগৌরবে বলতেন, ‘আনা আফসাহুল আরব’ আমিই আরবের শুদ্ধতম ভাষা সাহিত্যের অধিকারী। কেননা, আমার জন্ম হয়েছে কোরাইশ বংশে আর বেড়ে ওঠেছি সাদ বিন বকর গোত্রে। সেখানেই কেটেছে ভাষা শিখার শৈশব। তাঁর যুগ ছিল কবিতার ছন্দ-উপমা, শব্দ ও বাণী-রূপকল্পে প্লাবিত।
সমাজ সভ্যতার নির্মাণ, চিন্তাচেতনা ও সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন, কালের সমস্যাবলির সমাধান ও সমকালীন জীবনকে সুন্দর সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে সুস্থ সাহিত্যের বিকল্প নেই। কারণ কোনো প্রকার পুঁথিগত বিশ্বাসের ভিত্তিতে নয়; বরং গত হওয়া সুদীর্ঘ দেড় হাজর বছরের বাস্তব চিত্র-ই প্রমাণ করে, ইসলামই একমাত্র সর্বশ্রেণীর সর্বকালের সেরা মুক্তির বার্তাবাহক। আর এ ইসলামের চির সফল অলৌকিক জীবন-দর্শনকে তুলে এনে লোকসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য সাহিত্যচর্চায় উলামায়ে ইসলামের সক্রিয় পদচারণার দাবি এবং ওয়ারিসে নবী সা:-এর উত্তরাধিকার হিসেবে দ্বীনি কর্তব্যও বটে।
সুখকর সংবাদ হলো, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, বিশেষ করে বাতিল ও অসুস্থ সাহিত্য চর্চায় নিমজ্জিত মানুষদের উপযুক্ত জবাব দিতে হালের উলামায়ে ইসলাম সাহিত্যচর্চাকে অনিবার্য প্রতিক্রিয়ায় স্বীকৃতি দিতে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। যদিও অতীতে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে সাহিত্যচর্চা থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। কিন্তু সময়ের পালাবদলে বদলেছে সব চিন্তাধারা। শুরু হয়েছে সাহিত্যচর্চা। একঘেয়ে চিন্তার হিমায়িত অতীতের বরফ গলেছে। উলামায়ে ইসলামের হৃদয়ের বাদশাহ নবীয়ে আরাবি সা:-এর আদর্শ অনুসরণে স্বীয় মাতৃভাষার অলঙ্কারে সুসজ্জিত হওয়ার পথ প্রয়াসী হয়েছেন। ফলে, সাহিত্য ফুলের সৌরভে সুভাসিত, কুরআনের ভাষায় ‘তাসুররুন-নাজিরিন’ মাত্রায় উন্নীত।
বাংলা সাহিত্যে উলামায়ে ইসলামের এ সাধনাকে আমরা কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করতে পারি।
বাংলা সাহিত্যে কওমি আলেমদের স্বল্পসময়ের সাধনায় যে পুঁজি গড়ে উঠেছে, তা পরিমাণের বিচারে বিস্ময়কর হলেও মানের বিচারে কাক্সিক্ষত মাত্রায় স্পর্শ করতে এখনো অনেক দেরি। তাই ভাষাশিল্পের সেই সাধনাকে শানিত করে তুলতে প্রয়োজন শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতা এবং তরুণ লিখিয়েদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন কওমি ওলামায়ে কেরামের সাহিত্য-সাধনার এ মহান অধ্যায়কে স্বজাতির সুধীজনদের সমীপে তুলে ধরার আশু ব্যবস্থা।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.