04/19/2025 এলডিসি উত্তরণে বাণিজ্য সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১১
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ চায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যের শুল্ক ছাড়। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার পর সম্ভাব্য ঝুঁকি উত্তরণের সহায়তা।
অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এছাড়া শিশুশ্রম ও মেধাস্বত্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচ্যসূচিতে। এছাড়া আরও কয়েকটি ইস্যু নিয়েই বুধবার বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসাবে সোমবার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে বাংলাদেশের এজেন্ডা চূড়ান্ত করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য ইতোমধ্যে আরও দুটি বৈঠক হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে। সেখানে তাদের মতামত সংগ্রহ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা টিকফা বৈঠকে তুলে ধরা হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক যুগান্তরকে জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ বছর টিকফা বৈঠক একটি চ্যালেঞ্জ বটে। কারণ নির্বাচনকে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে এ বৈঠক। আমি বলব এখন বৈশ্বিক সংকটসহ বড় বড় ইস্যু অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে বড় জোটগুলো যেমন জি-২০ এ ধরনের গ্রুপ, তারা সহায়তা দিতে পারে কি না সেটি আলোচনায় বলতে হবে।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যা আলোচনায় স্থান পেতে পারে বৈঠকে। তিনি আরও বলেন, স্বল্পআয়ের দেশ থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্য সংকটে পড়ার মুখে বাংলাদেশ কিছু সুবিধা চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। বিশেষ করে শুল্কমুক্ত, ট্যারিফের মতো বিষয়গুলো শিথিল করার আহ্বান জানাতে পারে ঢাকা।
ঢাকায় অনুষ্ঠেয় টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে তার দেশের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে।
অবশ্য এর আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টিকফা ষষ্ঠ কাউন্সিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অগ্রাধিকার বাজারসুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলনায় পোশাক তৈরি করে সে দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যাতে শুল্ক আরোপ না করে, বাংলাদেশ সে প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটিকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশের তুলা রপ্তানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশে।
এছাড়া মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, শ্রম সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডাটা সুরক্ষা আইন, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) বাংলাদেশি ওষুধ নিবন্ধন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা, বাংলাদেশের বাদাম রপ্তানির ওপর শুল্ক কমানো এবং বাংলাদেশের বীজ বাজারে প্রবেশাধিকারের জন্য বীজ আইন সহজীকরণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে। এসব বিষয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে আসন্ন বৈঠকে।
টিকফা বৈঠক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় টিকফা বৈঠক দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিমূলক হিসাবে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর আরও একবার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসা হবে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র মূলত বাংলাদেশের শিল্প কারখানার শ্রম ইস্যু, মেধাস্বত্ব, শিশুশ্রম, ডাটা সুরক্ষা আইন নিয়ে আলোচনা করতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিকবার প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, টিকফা স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। এর আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে চুক্তি স্বাক্ষরের তাগিদ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। টিফাই পরে টিকফা হয়। চুক্তিতে বলা হয়, বছরে কমপক্ষে একবার এ ফোরামের বৈঠক হবে। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় প্রথম ও ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় বৈঠক হয়।
এভাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন, ওয়াশিংটন-ঢাকা করে প্রায় প্রতিবছরই টিকফা ফোরামের বৈঠক হয়। কিন্তু গত দশ বছরে ৬টি বৈঠক হলেও দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যায়নি। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এ বৈঠক একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। তারা মনে করছে এটি নির্বাচনে এক ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.