11/22/2024 সাত দশক ধরে লোহার ফুসফুসের ভেতরে থেকে বেঁচে আছেন তিনি
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:১৯
গত সাত দশক ধরে একটি ৬০০ পাউন্ড লোহার ফুসফুসের মাধ্যমে বেঁচে আছেন ''পোলিও পল"। আসল নাম পল আলেকজান্ডার। বয়স ৭৭ বছর। ১৯৫২ সালে পোলিওতে আক্রান্ত হন যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। মার্চ মাসে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে দীর্ঘতম 'আয়রন ফুসফুসের রোগী' হিসাবে ঘোষণা করে।
১৯৪৬ সালে জন্মের পর থেকে তিনি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। ঠিক গত বছর, আলেকজান্ডারের শরীরের যত্ন নেবার জন্য একটি তহবিল সংগ্রহকারী সংস্থা ১ লক্ষ ৩২ হাজার ডলার সংগ্রহ করে। ১৯৫২ সালে আমেরিকায় রেকর্ড সংখ্যক শিশু পোলিওয় আক্রান্ত হয়েছিল, কারণ তখনও আবিষ্কার হয়নি পোলিও রোগের টিকা। পোলিওমাইলাইটিস (পোলিও) স্পাইনাল কর্ডের মোটর নিউরনকে আক্রমণ করে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং পেশীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করে, অবশেষে সেগুলিকে এমন দুর্বল করে তোলে যে একজন ব্যক্তি নিজে থেকে শ্বাসও নিতে পারেন না।
জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আসে ১৯৫৫ সালে। ১৯৭৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু আলেকজান্ডারের জন্য তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ তাঁর শরীরের ঘাড় থেকে নিচের অংশ পোলিওর জেরে তখন অবশ।
শ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন পল। কিন্তু মুখের রঙ নীল হয়ে আসছিলো। হঠাৎই এক চিকিৎসক জরুরীকালীন ভিত্তিতে পলের ‘ট্রাকিয়োটমি’ অপারেশন করেছিলেন। ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইড বের করে এনেছিলেন।
কিন্তু ততক্ষণে পক্ষাঘাতে অসাড় হয়ে গিয়েছিল পলের ফুসফুস। তাই ছ’বছরের পলকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল সিলিন্ডার আকৃতির প্রকাণ্ড এক মেশিনের ভেতর। যে মেশিনটি কৃত্রিম ফুসফুসের কাজ করে। তাই মেশিনটিকে বলা হত ‘আয়রন লাং’ বা লোহার ফুসফুস। আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হলেও আলেকজান্ডার তার লোহার ফুসফুসে থাকতেই পছন্দ করেন। তিনি ২০২০ সালে গার্ডিয়ানকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে নতুন মেশিনগুলি তৈরি হলেও, তিনি তার পুরানো লোহার ঘোড়ার সাথেই দিব্যি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
তিনি তার গলায় আরেকটি ছিদ্র করতে রাজি নন- যা নতুন ডিভাইসগুলির জন্য প্রয়োজন হবে। আলেকজান্ডার লোহার ফুসফুসের বাইরে খুব অল্প সময়ের জন্য শ্বাস নিতে পারেন, যাকে ফ্রগ ব্রিথিং বলা হয়। এতো বাধা সত্ত্বেও পল উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করেছেন, কলেজে স্নাতক হয়েছেন, আইনের ডিগ্রি অর্জন করেছেন, কয়েক দশক ধরে আইন অনুশীলন করেছেন।
একটি স্মৃতিকথায় লিখেছেন- এসবই সম্ভব হয়েছে তার লোহার ফুসফুসের জন্য। আলেকজান্ডার ২০২১ সালের একটি ভিডিও সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন -''আমি কখনই হাল ছাড়িনি এবং এখনো ছাড়বো না।'' আলেকজান্ডারের বয়স বাড়ার সাথে সাথে, তিনি কনট্রাপশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন এবং তাঁকে সর্বদা নজরে রাখতে হয়। পল একটি ছোট এক কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন যার কোনো জানালা নেই।
২০২২ সালের নভেম্বরে GoFundMe নামের একটি সংস্থা তার জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে গিয়ে জানায় ''আলেকজান্ডারের জীবন কোথায় যেন চুরি হয়ে গেছে। যে মানুষটি সারাজীবন অন্যের প্রতি যত্নশীল থেকেছেন এবার তাঁর প্রতি যত্ন নেবার সময় এসেছে।''
সূত্র : নিউইয়র্ক পোস্ট
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.