11/22/2024 মফিজ ভাইয়ের আবিষ্কার - আহসান হাবীব
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৬ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৭
‘মুরগি গেছে যাক, শিয়ালের মন তো বুঝলাম...!’ জারিফের বাবা গম্ভীর গলায় বললেন।
‘কিন্তু চাচা, এখানে শিয়াল আসবে কোত্থেকে?’ গগন না বলে পারে না। জারিফ আস্তে করে গগনকে চাপ দেয়, যার অর্থ তার বাবার কথায় মন্তব্য না করাই ভালো। জারিফের বাবা বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে গগনের দিকে তাকালেন। গগন চেপে গেল।
গগনদের পাড়ায় নতুন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার যত পালা পশুপাখি আছে, সব চুরি হচ্ছে। যেমন বাবুলদের বাসার ময়না চুরি হয়েছে। সজীবদের কুকুর। মজনুদের তিন-তিনটা বিড়াল। আফ্রিদাদের এক জোড়া রাজহাঁস। শেষ চুরিটা হয়েছে জারিফদের বাসার পালা এক জোড়া মুরগি। জারিফ গগনকে ধরে নিয়ে এসেছে, সে যদি চোরকে শনাক্ত করতে পারে। কারণ, কে না জানে গগন এই পাড়ার ‘সেই রকম’ এক গোয়েন্দা। কিন্তু জারিফের বাবার ধারণা, এটা চোরের কাজ না, নিয়েছে শিয়াল। পেছনের জঙ্গলে এখনো নাকি কিছু শিয়াল রয়ে গেছে। অথচ পেছনে কোনো জঙ্গলই নেই। একসময় ছিল জঙ্গল অবশ্য। কিন্তু জারিফের বাবার ধারণা, জঙ্গল অবশ্যই আছে এবং সেখানে শিয়ালও আছে। তাই এই দার্শনিক উক্তি...!
‘মুরগি গেছে যাক, শিয়ালের মন তো বুঝলাম...’
কিন্তু গগনের খুবই আশ্চর্য লাগছে। ব্যাপারটা তো সত্যিই অদ্ভুত! বেছে বেছে শুধু পালা পশুপাখি চুরি হচ্ছে...কেন? কে এই কাজ করছে? কখন করছে? কীভাবে করছে? ভাবতে গিয়ে গগনের মাথা গরম হয়ে ওঠে।
কিছু বুঝলি? জারিফ জানতে চায়। গগনের ওপর জারিফের অগাধ বিশ্বাস।
বুঝব কীভাবে তোর বাবার সঙ্গে তো কথাই বলতে পারলাম না। তুই-ই তো বলতে দিলি না।
কী বলব বল, বাবা তো একটু ইয়ে টাইপ।
চল মোতাব্বির কাগুর দোকানের লাল চা খাই। গগন বলে। গগন দেখেছে কোনো কিছু চিন্তা করতে গেলে যখন মাথা কাজ করে না, তখন মোতাব্বির কাগুর দোকানের লাল চা খেলে তার মাথা খুলে যায়।
ওরা গিয়ে দেখে মোতাব্বির কাগুর টঙের দোকানে লোকজন নেই, খালি একজন বসে আছে হাতে খালি কাপ নিয়ে, মূর্তির মতো। গায়ের কাপড়চোপড় অসম্ভব ময়লা। লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে। চুল-দাড়িতে লোকটাকে অবশ্য ঠিক চেনা যাচ্ছে না। লাল চা নিয়ে খেতে খেতে গগন ভাবছিল এই লোকটাকে কোথায় যেন দেখেছে। তখনই লোকটা কথা বলে উঠল—
গগন, আমি একটা দারুণ যন্ত্র আবিষ্কার করেছি।
আরে এ তো সেই মফিজ ভাই। যাঁকে সবাই পাগলা মফিজ ডাকে। যিনি নিজেকে একজন বৈজ্ঞানিক ভাবেন। তাঁর ধারণা, নিউটনের মাথায় যে আপেলটা পড়েছিল, সেটা নাকি তাঁর মাথায় পড়ার কথা ছিল।
আরে মফিজ ভাই যে, আপনি এত দিন কোথায় ছিলেন?
ভূমিকম্প নিয়ে একটা সেমিনারে অ্যাটেন্ড করতে গিয়েছিলাম।
কোথায়?
জাপান। এই তো আজ সকালেই ঢাকায় ল্যান্ড করলাম।
গগন বহু কষ্টে হাসি আটকাল। তবে জারিফের ভাব দেখে মনে হলো সে মফিজ ভাইয়ের কথাবার্তা বিশ্বাস করছে। সে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে মফিজ ভাইয়ের দিকে।
মফিজ ভাই কী যেন আবিষ্কারের কথা বলছিলেন?
হ্যাঁ, ওই ভূমিকম্প টের পাওয়া-বিষয়কই একটা যন্ত্র।
বলেন কী! এ ধরনের যন্ত্রই তো আমাদের দরকার।
হ্যাঁ, এই যন্ত্রটা তোকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে জানান দেবে যে ভূমিকম্প আসছে।
ওহ্ দারুণ ব্যাপার। যন্ত্রটা আমি দেখতে চাই।
না, এখন সম্ভব না।
কেন যন্ত্র কি পুরোপুরি তৈরি হয়নি?
তা হয়েছে।
তাহলে আমাদের দেখাতে সমস্যা কী?
সমস্যা আছে। যন্ত্রটা উদ্বোধনের আগে আমি আমপাবলিককে দেখাতে চাইছি না।
তা কাকে দিয়ে উদ্বোধন করাবেন?
স্টিফেন হকিংকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে চাই। কিন্তু ওনাকে ফোনে পাচ্ছি না। তোর কাছে স্টিফেন হকিংয়ের নতুন ফোন নম্বরটা আছে?
আমার ফোনই নেই। গগন বলে।
হুম...পাগলা মফিজ হঠাত্ কাপটা রেখে উঠে হাঁটা দেন। গগনের মনটা একটু খারাপ হয়। এই মফিজ ভাই খুব ভালো ছাত্র ছিলেন একসময়। ওঁদের স্কুলেরই বড় ভাই ছিলেন তিনি। ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট সায়েন্স ফেয়ারে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছিলেন। সেই মফিজ ভাইয়ের এই অবস্থা! কোথায় কোথায় হারিয়ে যান। আবার একদিন এসে হাজির হন। জারিফরা চেনে না কিন্তু গগনের মতো যারা এখানে জন্ম থেকেই আছে, তারা সবাই পাগলা মফিজকে চেনে।
লোকটা বৈজ্ঞানিক নাকি?
সুস্থ থাকলে হয়তো একজন ভালো বৈজ্ঞানিক হতে পারতেন, কে জানে...চল, বাড়ি যাই...
বাসায় ঢুকতে যাবে তখনই মাথার ভেতর বিষয়টা ক্লিক করল গগনের। আরে তাই তো! তখনই সে ছুটল...ছুট ছুট ছুট...এক ছুটে একবারে পাগলা মফিজ ভাইয়ের বাসার গেটে। মফিজ ভাই গেটেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। গগনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল তাঁর।
তুই?
মফিজ ভাই, আপনার যন্ত্রটা একটু দেখা দরকার।
কেন?
খুব ইচ্ছে করছে যে দেখার জন্য। এত বড় একটা যন্ত্র আবিষ্কার করলেন।
দেখাতে পারি এক শর্তে।
কী শর্ত?
তুই স্টিফেন হকিংয়ের নতুন ফোন নম্বরটা জোগাড় করে দিতে পারবি? পুরোনোটা ধরছেন না।
আচ্ছা, পারব।
কিংবা ই-মেইল হলেও চলবে।
আচ্ছা আচ্ছা...যন্ত্রটা আগে দেখি।
চল তাহলে।
পাগলা মফিজের সঙ্গে বাড়ির পেছনে এল গগন। দেখে একটা বড় বাক্স সাদা কাপড়ে ঢাকা।
—এই যে এটা। মফিজ ভাই গম্ভীর হয়ে বলেন।
—চাদরটা সরাই?
—সরা।
চাদরটা সরাতেই গগন হতভম্ব হতে গিয়েও ঠিক হতভম্ব হতে পারল না। সে যা ভেবেছিল তা-ই। বাক্সটা আসলে বাক্স না। একটা লোহার খাঁচা। তার ভেতর বাবুলদের বাসার ময়না, সজীবদের কুকুর, মজনুদের তিন-তিনটা বিড়াল, আফ্রিদাদের এক জোড়া রাজহাঁস। জারিফদের এক জোড়া মুরগি। সবগুলো অবশ্য আলাদা আলাদা পার্টিশন করা অনেকটা চিড়িয়াখানার মতো করে সাজানো।
—এই আপনার যন্ত্র?
—কেন, তুই জানিস না ভূমিকম্প সবার আগে টের পায় পশুপাখিরা। তাই তো আমি ওদের জোগাড় করেছি। সব সময় ওদের পর্যবেক্ষণে রাখি...ওরা চেঁচামেচি শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে হ্যান্ডমাইকে পাড়ার সবাইকে সাবধান করব। কী, বুদ্ধিটা ভালো না? গগন দেখে মফিজ ভাই জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে আছেন তার দিকে...তাদের স্কুলের একসময়ের সেরা ছাত্র মফিজ ভাই। যাঁকে এখন সবাই পাগলা মফিজ বলে ডাকে...।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.