11/13/2024 দাঙ্গা : গুরুগাঁও ছেড়ে পালিয়েছেন হাজার হাজার মুসলিম
মুনা নিউজ ডেস্ক
১১ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৩৩
হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ ও মুসলমানদের লক্ষ্য করে বিক্ষিপ্ত হামলার পর জীবনের ভয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির কাছের বাণিজ্যিক কেন্দ্রখ্যাত গুরুগাঁও ছেড়ে পালিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি মুসলমান। ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সেখানকার বাসিন্দা, পুলিশ ও স্থানীয় একটি গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নয়াদিল্লির অদূরে হরিয়ানা রাজ্যের নুহ ও গুরুগাঁও জেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে সাতজনের প্রাণহানির ঘটনার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর ওই এলাকায় রয়টার্সের প্রতিনিধিরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা গুরুগাঁওয়ের দুটি বড় বস্তি এলাকায় মুসলমানদের মালিকানাধীন বা পরিচালিত দোকানপাট ও তাদের বাড়িঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন।
হরিয়ানার ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে আদর্শগত মিল রয়েছে এমন কিছু সংগঠনের আয়োজিত হিন্দু ধর্মীয় মিছিলকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল। এই হামলার প্রতিশোধে গত ৩১ জুলাই হরিয়ানায় সহিংসতা শুরু হয়। আক্রমণ চালানো হয় মুসলমানদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে। যদিও পুলিশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কিন্তু এরপরও মুসলমানদের লক্ষ্য করে ছোটখাট হামলার ঘটনা আরও কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে। আর এই হামলার কারণে সেখানকার মুসলিম পরিবারগুলো গুরুগ্রামের নবনির্মিত একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে অন্তত ২৫০টি কোম্পানির অফিস আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, জেলার বস্তি এলাকার দুটি ছোট মসজিদে পাথর নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর ফলে শত শত মুসলিম পরিবার বস্তির এক কক্ষের ঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তাদের মধ্যে অনেকেই শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে ট্রেন স্টেশনে আশ্রয় নেন।
সংঘাতের পর গুরুগাঁও ছেড়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে গ্রামের বাড়িতে পালিয়েছেন রউফুল্লাহ জাভেদ। পেশায় দর্জি বিহারের এই বাসিন্দা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই সারারাত রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে কাটিয়েছেন। কারণ ওই সময় রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম অনেক বেশি নিরাপদ ছিল।’
ভারতীয় মুসলমানদের সংগঠন জমিয়ত-উলেমা-ই-হিন্দের গুরুগাঁও শাখার প্রেসিডেন্ট মুফতি মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, সহিংসতার পর ৩ হাজারেরও বেশি মুসলমান জেলাটি ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
বিহারে গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে আসা চারজন মুসলমান দোকানদার টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, সেখানকার কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীর সদস্যরা গুরুগাঁওয়ে তাদের ব্যবসা ও পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
‘হিন্দু পুরুষদের একটি বড় দলে এসে আমার কাছে জানতে চেয়েছে, আমি কত টাকা আয় করি,’ বলেন শহীদ শেখ। পেশায় নাপিত শহীদ শেখ গুরুগাঁওয়ের তিগরা গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছেন। ওই গ্রামটিতে এক হাজার ২০০টিরও বেশি মুসলিম পরিবার রয়েছে বলে জানান তিনি।
শহীদ শেখ বলেন, সহিংসতার পর অনেক মুসলমান কিছু সময়ের জন্য চলে যাওয়াই ভালো বলে সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া সেখানে মুসলমানদের কাছে ভাড়া দেওয়া দোকানের কিছু হিন্দু মালিক তাদের দোকান খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে মুসলিম-বিরোধী সহিংসতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গরুর মাংস খেয়েছে বা গরু পাচারের চেষ্টা করছে, এমন গুজব ছড়িয়ে তথাকথিত গোরক্ষকরা প্রায়ই দেশটিতে মুসলমানদের ওপর হামলা চালায়। ভারতে গরুকে অনেক হিন্দু পবিত্র বলে মনে করেন। দেশটির অনেক রাজ্যে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
গুরুগাঁও নামে পরিচিত হরিয়ানার ১৫ লাখের বেশি মানুষের এই শহরটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিভিন্ন কোম্পানির অফিস রয়েছে। সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ডেল, স্যামসাং, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং এবং ডেলয়েটের মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলো সেখানে বাণিজ্যিক ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে।
হরিয়ানা পুলিশ বলেছে, সহিংসতার ঘটনায় উভয় সম্প্রদায়ের ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ওই সময় পালিয়ে যাওয়া কিছু মুসলমান এখন ফিরে আসতে শুরু করেছেন।
রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ বলেছেন, তিনি কিছু মুসলমানের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর পেয়েছেন। তবে বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, কেউ তাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়নি এবং আমরা সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল সব এলাকায় পূর্ণ নিরাপত্তা দিচ্ছি।ৎ
সূত্র: রয়টার্স।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.