11/22/2024 ভরা শ্রাবণেও মাঠ ফেটে চৌচির!
মুনা নিউজ ডেস্ক
৪ আগস্ট ২০২৩ ০৪:২৭
জমিতে চারজন কৃষি শ্রমিক নিয়ে আমন চারা তুলে নিজেই আঁটি বাঁধছিলেন জমির মালিক কৃষক ধীরেন কুমার। ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘আগে আমন ধান নিয়্যা এইংক্যা বিপদে পরি নাই। ঝরি নাই, জমি শুকিয়্যা খটখটা নাগছে। চারা জমিত গাড়তেই খরচ হবে দুই হাজার ট্যাকা আর ঝরি না থাকায় আরো আড়াই হাজার ট্যাকা দেওয়া লাগব্যে সেচ মালিকক।
হিসাব করেন, খালি জমিত বোলান (রোপণ) দিতেই পাঁচ হাজার নাই। আবাদ ভালোমতো শুরু হলে অন্য খরচ তো আছেই। এব্যার ভাগ্যত যে কী আছে ভগবানেই জানে।’
একই সুর কৃষক মজিবর মিয়া, ছবেদ আলী, দেলোয়ার হোসেন, শাহাজান মিয়াসহ অন্যদের।
তারা অবাক, সাধারণত আমন মৌসুমে চারা রোপণের সময় সেচের প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টির পানিতেই সব হয়ে যেত। এবার পরিস্থিতি আলাদা।
অন্যবার এই সময়টাতে চারা রোপণের কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসে।
কিন্তু এবার চাষিরা বিপাকে পড়ে কিছুটা পিছিয়ে গেছেন। গত তিন দিন সামান্য ঝিরঝিরে বৃষ্টি হলেও তাতে খরায় শুকিয়ে যাওয়া জমির ফাটল বন্ধ করতে পারছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চারা রোপণ প্রক্রিয়া। সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি টাকার। যা মৌসুমের শুরুতেই চাষিদের ভাবিয়ে তুলছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তার পরও আসন্ন আমন মৌসুমকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধায় জমিতে জমিতে চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। বেশ কিছুদিন আগেই বীজতলা থেকে চারা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন জমিতে জমিতে রোপণের কাজে নামবেন কৃষক। তাদের আশা ছিল এবার আমন মৌসুমে লাভের মুখ দেখাবেন। কিন্তু এবার গাইবান্ধায় দাবদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে জমি শুকিয়ে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। ফলে এবার আমন মৌসুমে কৃষকদের বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবার রোপা আমন মৌসুমে কৃষকদের দ্বিগুণ খরচ পোহাতে হচ্ছে। হঠাৎ করেই সেচের জন্য বাড়তি খরচের কথা ভেবে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি সার, তেলসহ অন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্যবৃদ্ধিও তাদের হতাশ করছে।
গাইবান্ধা সদরের রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিণ সিংহা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত বছরগুলোতে বৃষ্টির পানিতেই এই আমন ধান রোপণ করতাম। গাইবান্ধায় তীব্র দাবদাহ আর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমি জমিতে সেচ দিচ্ছি। এতে আমার অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। এবার আমার রোপা আমনে তেমন পোষাবে না। এবার খরচ তোলা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।’
কৃষক শাহিন মিয়া বলেন, ‘অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড তাপদাহে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমি বাধ্য হয়ে বীজতলায় সেচ দিচ্ছি। সেচ মালিকরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্বিগুণ হারে সেচের টাকার নিচ্ছেন। এবার সেচের দাম যেন বেশি না নিতে পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য সরকারের দৃষ্টি চাই।’
একই এলাকার কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমরা এমনিতেই ধার-দেনা, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ধান চাষে নামি। কিন্তু সার, কিটনাশক, শ্রম, সেচসহ কৃষিক্ষেত্রে সব কিছুর দাম বেড়েছে। আমরা কিভাবে ধান চাষ করব? ধরা যাক শেষ পর্যন্ত ধান পেলাম। কিন্তু বাজারে দাম পাব না। দেখার কেউ নেই। আমাদের শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। তার পরও আমি শুধু পেটের দায়ে ধান চাষ করি। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি, এবার থেকে যেন ন্যায্য দাম দিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেন তারা।’
আব্দুল হাই বলেন, ‘সেচ পাম্পের মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো টাকা দাবি করেন। প্রশাসন যদি এদিকে লক্ষ রাখে তাহলে কিছুটা হলেও উদ্ধার পাব।’
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, এবার গাইবান্ধায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে এক লাখ ২৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারণে রোপা আমন ধান লাগানোর কাজ সর্বক্ষেত্রে এখনো শেষ হয়নি। এ জন্য সেচ ব্যবস্থার জন্য সকল ধরনের সেচযন্ত্র চালু করা হয়েছে। জেলার সকল কৃষক এই সেচ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে কৃষকদের বাড়তি খরচ হলেও আমন চাষের ওপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.